মসজিদে দুনিয়াবী কথাবার্তা বললে, চল্লিশ বছরের নেক আমল বরবাদ 
মতিউর রহমান কৃত প্রচলিত জাল হাদিস' বইয়ের ১২৬ পৃষ্ঠায় লিখেছে “এটা রাসূল ﷺ এর হাদিস নয় বরং লােকমুখে হাদিস।” তাছাড়া হাদীসের নামে জালিয়াতি বইয়ের ২৪০-২৪১পৃষ্ঠায়ও (চতুর্থ প্রকাশ) অনুরূপ বক্তব্যের সমর্থন দিয়েছেন। | মসজিদে বসে দুনিয়াবী ও অপ্রাসঙ্গিক কথা বলা হারাম; এ কথাটি সত্য। বিভিন্ন হাদিসের বর্ণনা দ্বারা এ বিষয়টি সঠিক হিসেবে প্রমাণিত। মসজিদ তৈরীর উদ্দেশ্য সালাত আদায়,আল্লাহর যিকির, ইত্যাদি কাজের জন্য। এ জন্যই হযরত আনাস رضي الله عنه হতে বর্নিত,রাসুল ﷺ বলেন, এগুলাে শুধু আল্লাহর যিকির,সালাত ও করত তিলাওয়াতের জন্য। | উপরক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়ে গেল মসজিদ দুনিয়াবী কথা বলার স্থান: মিশকাতুল মাসাবীতে ‘বাবুল মাসাজিদ' অধ্যায়ে হযরত হাসান বসরী رضي الله عنه  হতে বর্ণিত রাসূল ﷺ ইরশাদ ফরমান
-“ওহে লােকেরা, শুন! এমন এক যমানারও আগমন ঘটবে যখন মানুষেরা। মসজিদে তাদের দুনিয়াবী কথাবার্তা বলবে। যখন এ ধরনের যামানা এসে যাবে, তখন তােমরা তাদের সাথে বসিও না। মহান আল্লাহ এহেন লােকদের থেকে সম্পূর্ণ অমুখাপেক্ষী।”
 -“হযরত আনাস رضي الله عنه  থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন," মানুষের মধ্যে এমন এক সময় আসবে,যখন তারা তাদের মসজিদ গুলােতে বৃত্তাকারে বসবে। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হবে দুনিয়া। এদের মধ্যে আল্লাহর কোন প্রয়ােজন নেই। তােমরা এদের সাথে বসবে না"। ইমাম হাকিম নিশাপুরী হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।”হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস رضي الله عنه থেকে বর্ণিত,"রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,"শেষ জামানায় কিছু মানুষ এরূপ হবে যে,তাদের কথাবার্তা তাদের মসজিদগুলোর মধ্যে হবে।এদের মধ্যে আল্লাহ তা'য়ালার কোন আবশ্যকতা নেই"
ইবনে হিব্বান তার আস্- সহিহ গ্রন্থে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।
শুধু তাই নয় আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী رضي الله عنه  বলেন, ইমাম কামালুদ্দীন ইবনুল হুমাম رضي الله عنه তাঁর শরহে হেদায়ায় বলেন,মসজিদে বৈধ কথাবার্তা বলাও মাকরুহে তাহরীম, আর তা নেক আমল খেয়ে ফেলে বলে উল্লেখ করেছেন।। (মােল্লা আলী কারী,মিরকাত: ২/৪১৮, হাদিস:৭৪৩) শুধু তাই নয় ইমাম নাওয়াভী رضي الله عنه বলেন মসজিদে জোরে ইলম আলােচনা বা অন্যান্য কথা বলা মাকরুহে তাহরীমী . (মিরকাত,২/৪১৯পৃ.হাদিস:৭৪৪) আল্লামা ইবনে হাযার আসকালানী رضي الله عنه উল্লেখ করেছেন,ইমাম মালেক رضي الله عنه কে প্রশ্ন করা হলাে যে মসজিদে জোরে ইলম আলােচনা করা সম্পর্কে
 ,অত:পর তিনি বলেন এই ইলম শিক্ষায় এবং অন্যান্য কাজে কোন নেকি নেই। (মিরকাত,২/৪১৯পৃ.হাদিস:৭৪৪) ।
দেখুন আমাদের দেশে কিছু লােক রয়েছে যারা দ্বীনের দাওয়াতের নাম দিয়ে মসজিদকে নিজের ঘরের মত বাসস্থান বানিয়ে কথাবার্তা বলার স্থান বানিয়ে নিয়েছে।। এমন লােকদের থেকে দূরে থাকা ওয়াজিব যা উক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়। বিস্তারিত জানার জন্য আমার শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষাগুরু আল্লামা মুফতি আলী আকবার সাহেব (মু.জি.আ.) বিরচিত প্রচলিত "তাবলীগ জামাতের স্বরূপ উন্মােচন' বইটি পড়ুন। আশা করি বুঝে আসবে। এখন আসুন দেখি চল্লিশ বছরের হাদিস কোথাও আছে কিনা।
আমরা প্রথমে বলবাে কোন কিতাবে নেই বলা জ্ঞান শূন্যতার পরিচায়ক এবং একটি হাদিসকে অস্বীকার করার নামান্তর। যেমন উসূলে ফিকহের প্রসিদ্ধ কিতাব নুরুল আনওয়ার এর লেখক আল্লামা শায়খ আহমদ মােল্লা জিওন رضي الله عنه স্বীয় তাফসীরে আহমদিয়াতে  এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লিখেন- মসজিদে দুনিয়াবী কথা বলা অবৈধ। তারপর এ হাদিস শরীফ ব্যক্ত করেন।
নবী করীম ﷺ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পাঁচ জায়গায় দুনিয়াবী কথা বলবে আল্লাহ তায়ালা তার চল্লিশ বছরের (নফল) ইবাদত নষ্ট করে দিবেন, এক. মসজিদ, দুই. কুরআনুল কারীম তিলাওয়াতের কালে, তিন. আযানের সময়, চার, জ্ঞানী আলিমদের মজলিসে, পাঁচ.কবরে যিয়ারতকালে।”
অতএব প্রমান হলাে এই হাদিস কিতাবে হাদিস হিসেবে বিদ্যমান রয়েছে। যদিও হাদিস দ্বঈফ হউক তারপরও উক্ত হাদিস হতে তাকওয়া অর্জন করতে হবে। তারা ইবনে তাইমিয়ার অনুসারী কাযি শাওকানীর দলীল গ্রহণ করেছে অথচ তার ফাওয়াইদুল মাওদুআতে ১/২৫ পৃষ্ঠা (দারূল কুতুব ইলমিয়্যাহ,বয়রূত, লেবানন মুদ্রিত) চল্লিশ বছরের ইবাদত নষ্ট হবার কথা উল্লেখ নেই,বরং সারা জিবনের আমল নষ্ট হয়ে যাবে উল্লেখ রয়েছে। যেমন তার বর্ণনার ধরন হলাে:অর্থাৎ- যে ব্যক্তি মসজিদে। দুনিয়াবী কথা বলবে আল্লাহ তায়ালা তার সব আমল বরবাদ করে দিবে। ইমাম সাগানী رضي الله عنه  উক্ত হাদিসকে জাল বা বানােওয়াট বলেছেন। 
এখানে দুটি বিষয় পাওয়া গেল, এক.কাযি শাওকানীর নিজস্ব কোন মতামত নেই। ২. সে ইমাম সাগানীর রায় উল্লেখ করেছেন আর ইমাম সাগানী চল্লিশ বছরের আমল বরবাদ হবে হাদিসকে জাল বলেননি যা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা এবং তার ব্যাপারে মিথ্যা অপবাদ। তিনি সমস্ত ইবাদত নষ্ট হয়ে যাবে তাকে জাল বলেছেন। মােল্লা আলী কারী رضي الله عنه ও সব আমল বরবাদ হবে বলে উক্ত হাদিসকে জাল উল্লেখ করেছেন।
উক্ত হাদিসটি যেহেতু বিখ্যাত উসূল বিদগণ গ্রহণ করেছেন সেহেতু বলা যায় উসূলবিদগণ মওদু হাদিস বর্ণনা হতে বিরত থাকাই তাদের নীতি। অবশ্যই তার নিকট উক্ত হাদীসের সনদ জানা রয়েছে।



Top