মুমিনের কলবে আল্লাহর অবস্থান হাদিস প্রসঙ্গে আলােকপাত
প্রচলিত জাল হাদিস (যা মাওলানা মতিউর রহমান লিখিত) ৮৯ পৃষ্ঠায় এ বিষয়ের একটি-
-“আসমান ও যমীন আমাকে সংকুলান করে না, কিন্তু একমাত্র আমার মুমিন বান্দার কলব আমাকে সংকুলান করে।” উক্ত হাদিসকে অন্য আরেক হাদিসের বক্তব্যের সাথে মিলিয়ে জাল প্রমাণ করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন। আমাদের বক্তব্য হলাে কোন হক্কানী মুহাদ্দিসগণের মতামত দিয়ে প্রমাণ করতে হবে হাদিসটি জাল বা বানােয়াট, তা না হলে তাে কারও মুখের বক্তব্যের দ্বারা বা চাপাবাজির দ্বারা জাল প্রমাণ হবে না।
হাদীসের নামে জালিয়াতি বইয়ের ২২৩ পৃষ্ঠায়ও উক্ত হাদিসটিকে অন্য দুটি রেওয়ায়েতের সাথে সংযুক্ত করে অন্য হাদীসের ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণের মতামতকে এ হাদীসের সাথে মিলিয়ে জাল প্রমাণ করার অপচেষ্টার বা প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন।
বিশ্ববিখ্যাত সূফী সম্রাট হুজ্জাতুল ইসলাম আবু হামেদ গাযযালী رضي الله عنه ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন গ্রন্থের প্রথম খন্ডে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। আর তাঁর সাথে সমর্থন জানিয়েছেন ও স্বীকার করেছেন অনেক ইমামগণ।
শুধুমাত্র ওহাবী ও আহলে হাদিসদের ইমাম ইবনে তাইমিয়া উক্ত হাদিস সম্পর্কে বলেন,
-“এটি ইসরাঈলী রেওয়াতে হিসেবে উল্লেখ করা হয়, উক্ত হাদিস কোন সনদ রাসূল ﷺ পর্যন্ত পৌঁছেছে এ সম্পর্কে আমি পরিচিত নই।” | উক্ত রেওয়ায়েতটি শুধু ইমাম গাযালী رضي الله عنه সনদ বিহীন উল্লেখ করেছেন, কিন্তু ইমাম গাযযালী رضي الله عنه এর নিকট অবশ্যই সনদ জানা রয়েছে। উক্ত রেওয়ায়েতের সমর্থনে তিনটি গ্রহণযােগ্য হাদিস রয়েছে সনদ সহ যা ইমাম সাখাভী رضي الله عنه তাঁর কিতাবে এবং ইমাম আযলুনী رضي الله عنه তার কাশফুল খাফায় বর্ণনা করেছেন। . দলীল নং-১-১০ ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল رضي الله عنه এ সমর্থনে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন
-“ইমাম আহমদ رضي الله عنه তাঁর ‘যুহুদ’ নামক কিতাবে বর্ণনা করেন, হযরত ওহাব ইবনে মুনাব্বাহ رضي الله عنه হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা আসমান সমূহকে খুলে দিলেন হিযকিল নামক ফেরেশতার জন্য। তিনি আরশ পর্যন্ত দেখতে পেলেন এবং বললেন আল্লাহ তুমি পাক পবিত্র, তােমার শান কত মহান। অত:পর আল্লাহ তায়ালা বললেন নিশ্চয় আসমান সমূহ ও আরশ দূর্বলতা প্রকাশ করেছে আমাকে স্থান দিতে কিন্তু মুমিনের দিল বা অন্তর নম্রতা প্রকাশ করে আমায় গ্রহন করেছে।” উক্ত হাদিসটি সম্পর্কে সাখাভী, আযপূনী ও আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী رضي الله عنه প্রমুখ মুহাদ্দিস নীরবতা পালন করেছেন যা দ্বারা সহিহ বলেই গ্রহণ করেছেন বুঝা যায়।
দলীল নং-১১ আল্লামা ইমাম শায়খ আব্দুল করীম জালিলী আশ-শাফেয়ী رضي الله عنه তাঁর (ইনসানে কামিল) গ্রন্থে বলেন
-“আল্লাহ তায়ালা বলেন, আসমান ও জমিন আমাকে সংকুলান করে না, কিন্তু একমাত্র আমার মুমিন বান্দার কলব আমাকে সংকুলান করে।"
দলীল নং-১২-১৭
মুমিন বান্দার কলবে আল্লাহ أزواجال থাকেন সে সম্পর্কে বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী رضي الله عنه তাঁর সুবিখ্যাত হাদিসের গ্রন্থে হাদিস উল্লেখ করেন এভাবে۔
-“হযরত আবি ইনাবাল খােলানী رضي الله عنه হতে বর্ণিত, রাসূলে খােদা ﷺ বলেন, যমিনবাসী থেকে অবস্থানের পাত্র রয়েছে তােমাদের প্রভুর ঐ পাত্র হল তাহার নেককার বান্দাগনের অন্তর সমূহ।আল্লাহ أزواجال বলেন, "আমাকে ধারণ করেছেন আমার প্রিয় পূণ্যবান বান্দাদের অন্তর বা কলব আর তার এ ধারণ ক্ষমতাকে এবং সুক্ষ্মতাকে আমি ভালবেসেছি।
নাসিরুদ্দীন আলবাণী, হাদিসটি বর্ণনা করে বলেন, হাদিস “হাসান পর্যায়ের। উক্ত হাদিসটি সহিহ যদিও আলবানী “হাসান” বলেছেন উক্ত হাদীসের একজন রাবী যার উপর ভিত্তি করে আলবানী “হাসান” বলেছেন। সে রাবিটি হল বাকীয়্যাতু বিন ওয়ালিদ বিন ছয়ীদ رضي الله عنه উক্ত রাবী সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবনুল মােবারক رضي الله عنه বলেছেন,"তিনি সত্যবাদী ছিলেন"। ২. ইমাম আদী رضي الله عنه বলেন : শাম দেশের মধ্যে তকালীন মুহাদ্দিসদের মধ্যে তাঁর হাদিস বর্ণনা অত্যন্ত দৃঢ় (শক্তিশালী) ছিল। | ৩, ইমাম নাসায়ী رضي الله عنه সহ অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ বলেন : তিনি যখন হাদিস বর্ণনা করতেন বিশ্বস্ততা সহকারেই করতেন,তবে তিনি হাদিসে দলীস করতেন। | ৪. ইমাম ইবনে হিব্বান رضي الله عنه বলেন, তিনি বিশ্বস্ত ছিলেন তবে তিনি তাদলীস করতেন।
৫. আব্দুল্লাহ বিন আহমদ رضي الله عنه বলেন :
-“তিনি একজন সৎ ব্যক্তি ছিলেন, শাম দেশে তার সাদৃশ্য কেউ ছিল না, আল্লাহ أزواجال'র রহমত তার উপর বর্ষিত হােক।
৬, ইমাম আবু ইসহাক জুরজানী বলেন : নিশ্চয় তিনি যখন হাদিস বর্ণনা করতেন বিশ্বস্ত সহকারে বর্ণনা করতেন। | আল্লামা আলুনী رضي الله عنه ও আল্লামা ইমাম সাখাভী رضي الله عنه বলেন, তিনি তাদলীস করতেন কিন্তু তার বর্ণনা হাদিস শুদ্ধ।
দলীল নং- ১৯ | আল্লামা ইমাম আব্দুর রউফ মানাবী رضي الله عنه তাঁর সংকলিত হাদীসে কুদসী ৯৯ নং হাদিস হিসেবে একটি হাদিস উল্লেখ করেন এভাবে যে,
-“হযরত ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বাহ رضي الله عنه হতে বর্ণিত আল্লাহ তা'য়ালা বলেন। আকাশ ও জমিন সমূহ আমাকে ধারণ করতে দুর্বলতা প্রকাশ করল। অবশেষে মুমিনের কলবই আমাকে ধারণ করতে সক্ষম হইল উক্ত হাদিসটি ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল رضي الله عنه তার কিতাবুদ-যুহুদ গ্রন্থে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম গাযযালী رضي الله عنه একটি হাদিস সংকলন করেন-“হযরত ইবনে উমর رضي الله عنه হতে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি রাসূল ﷺ কে জিজ্ঞাসা করলেন আল্লাহ أزواجال কী আসমানে না যমিনে? তিনি বললেন আল্লাহ أزواجال মুমিন বান্দাদের কলবে। তাই প্রমানিত হলাে প্রথমে তারা যে হাদিসটি উল্লেখ করে তা জাল বলেছে তাদের সে বক্তব্য সঠিক হলেও আমাদের কোন অসুবিধা নেই, কেননা এ বিষয়ে যেহেতু আরও অনেক সনদ রয়েছে।
Home
»
প্রমানিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন ১ম খন্ড
» মুমিনের কলবে আল্লাহর অবস্থান হাদিস প্রসঙ্গে