উত্তম চরিত্রের ফযীলত সম্বলিত সেই ২০০টি বিশুদ্ধ হাদীসের সমষ্টি
مکارم اخلاق
এর অনুবাদকৃত কিতাবের নাম
"উত্তম চরিত্র"
লিখক: হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আবু কাসিম সুলাইমান বিন আহমদ তাবারানী (ওফাত ৩৬০ হিজরি)
উপস্থাপনায় আল মদীনাতুল ইলমিয়া মজলিশ (দাওয়াতে ইসলামী)
প্রকাশনায়ঃ মাকতাবাতুল মদীনা
প্রকাশকাল : রজব ১৪৪০ হিজরি
মার্চ ২০১৯ ইংরেজি প্রকাশনায় : মাকতাবাতুল মদীনা
সত্যায়ন পত্র তারিখ: ২ যিলহজ ১৪৩০ হিজরি
সূত্র: ১৬৫
الحمد بلورين المحليين واللوة والسلام على سيد المرسلين و على اله وأخيه أجمعين
এই মর্মে সত্যায়ন করা যাচ্ছে যে, “মাকারিমুল আখলাখ” এর অনুবাদ “উত্তম চরিত্র” (প্রকাশনায় মাকতাবাতুল মদীনা) কিতাবটির উপর কিতাব ও রিসালা : নিরীক্ষণ বিভাগের পক্ষ থেকে দ্বিতীয়বার নিরীক্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। বিভাগটি এতে উদ্দেশ্য এবং অন্তর্নিহিত ব্যাখ্যার দিক থেকে : পরিপূর্ণভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে। তবে কম্পােজিং বা বাইন্ডিং এর : ভূলের জন্য মজলিশ দায়ী নয়।
কিতাব ও রিসালা নিরীক্ষণ বিভাগ
(দাওয়াতে ইসলামী)
২৪-১১-২০০৯

(মাদানী অনুরােধ: অন্য কারাে এই কিতাবটি ছাপানাের অনুমতি নেই)
সূচীপত্রঃ
▪ বিষয় কিতাবটি পাঠ করার ১৪টি নিয়্যত।
▪ দুইটি মাদানী ফুল।
▪ আল মদীনাতুল ইলমিয়া।
▪ প্রথমে এটি পড়ে নিন !
▪ লেখক পরিচিতি।
▪ কোরআন মজীদের তিলাওয়াত , অধিকহারে আল্লাহর যিকির , মুখের কুফলে মদীনা , মিসকিনদের প্রতি ভালবাসা ও তাদের সাথে মেলামেশা করার ফযীলত।
▪ উত্তম চরিত্রের ফযীলত।
▪ নম্র স্বভাব , সচ্চরিত্র ও বিনয়ের ফযীলত।
▪ মানুষের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করার ফযীলত ।
▪ মুসলমান ভাইয়ের জন্য মুচকি হাসির ফযীলত।
▪ নম্রতা ও সহনশীলতার ফযীলত।
▪ ধৈর্য ও দানশীলতার ফযীলত।
▪ রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখার ফযীলত।
▪ দয়া ও কোমল হৃদয়ের ফযীলত।
▪ রাগ দমন করার ফযীলত।
▪ লােকদেরকে মার্জনা করার ফযীলত।
▪ মুসলমানদের কল্যাণ কামনা করার ফযীলত।
▪ অন্তরের পরিচ্ছন্নতা এবং মুসলমানের প্রতি ঘৃণা থেকে বাঁচার ফযীলত।
▪ মানুষের মাঝে মীমাংসা করানাের ফযীলত।
▪ হক আদায় করার ফযীলত মজলুমকে সাহায্য করার ফযীলত।
▪ অত্যাচারীকে অত্যাচার করা থেকে বিরত রাখার বর্ণনা।
▪ মুর্খদের বাধা প্রদানের বর্ণনা ।
▪ মুসলমানদের সাহায্য এবং তাদের চাহিদা পূরণ করার ফযীলত।
▪ অন্যের দুঃখ - কষ্ট লাঘব করার ফযীলত।
▪ দুর্বলদের ভরণ পােষণ করার ফযীলত।
▪ এতিমের ভরণ - পােষণ করার ফযীলত।
▪ বে - ওয়ারিশ শিশুদের শিক্ষা - দীক্ষা এবং বড় হওয়া ▪ পর্যন্ত তাদের জন্য ব্যয় করার ফযীলত।
▪ উত্তম আচরণের ফযীলত নেক আমল করার ফযীলত।
▪ মুসলমানদের উপর অত্যাচার করার নিন্দা।
▪ মুসলমান ভাইয়ের পক্ষে জায়িয সুপারিশ করার ফযীলত।
▪ মুসলমানদের সম্মান রক্ষা এবং তাদের সাহায্য করার ফযীলত।
▪ মানুষকে ভালবাসার ফযীলত।
▪ আল্লাহর রাস্তার সৈন্যদের সাহায্য করার ফযীলত।
▪ হাজীকে সাহায্য করা এবং রােযাদারকে ইফতার করানাের ফযীলত।
▪ ছােটদের উপর স্নেহ, বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ওলামাদের সম্মান করার ফযীলত।
▪ ওলামাদের জন্য মজলিসে জায়গা করে দেওয়ার ফযীলত।
▪ মুসলমান ভাইকে বালিশ উপস্থাপন করার ফযীলত।
▪ আহার করানাের ফযীলত।
▪ মুসলমান ভাইকে পােশাক পরিধান করানাের ফযীলত।
▪ প্রতিবেশীর হকের বর্ণনা।
▪ তথ্যসূত্র

নেকীর ভান্ডারঃ
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আল্লাহ পাক ও তাঁর প্রিয় রাসূল (ﷺ) এর সন্তুষ্টি অর্জন এবং সচ্চরিত্রবান মুসলমান হওয়ার জন্য “দাওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনা থেকে ‘মাদানী ইনআমাত’ নামের রিসালা সংগ্রহ করতঃ সেই অনুযায়ী জীবন অতিবাহিত করার চেষ্টা করুন। তাছাড়া আপনার শহরে অনুষ্ঠিতব্য দাওয়াতে ইসলামীর সাপ্তাহিক সুন্নাতে ভরা ইজতিমায় নির্দিষ্ট সময়ে অংশগ্রহণ করে অধিকহারে সুন্নাতের বাহার কুঁড়িয়ে নিন। দাওয়াতে ইসলামীর সুন্নাত প্রশিক্ষণের অসংখ্য মাদানী কাফেলা শহরে শহরে, গ্রামে গ্রামে সফর করতে থাকে, আপনিও সুন্নাতে ভরা সফরে অংশগ্রহণ করে নিজের আখিরাতের জন্য “নেকীর ভান্ডার” গড়ে তুলুন। আপনি আপনার জীবনে আশ্চর্যজনক ভাবে “মাদানী পরিবর্তন সাধন হতে দেখবেন।


কিতাবটি পাঠ করার ১৪টি নিয়্যত

▪প্রিয় নবী (ﷺ) ইরশাদ করেন: "মুসলমানের নিয়্যত তার আমলের চেয়ে উত্তম।”
(আল মু'জামুল কবির লিত তাবারানি, ৬/১৮৫, হাদীস- ৫৯৪২)

দুইটি মাদানী ফুল:
(১) ভাল নিয়্যত ছাড়া কোন ভাল কাজের সাওয়াব পাওয়া যায়না।
(২) ভাল নিয়্যত যত বেশি, সাওয়াবও তত বেশি।
(১) প্রতিবার হামদ ও (২) সালাত এবং (৩) তা'উয ও (৪) তাসমিয়া সহকারে শুরু করবাে। (এই পৃষ্ঠার প্রারম্ভে দেওয়া আরবী ইবারতটি পাঠ করাতে এই চারটি নিয়্যতের উপর আমল হয়ে যাবে) (৫) কোরআনি আয়াত এবং (৬) হাদীসে মােবারাকার যিয়ারত করব। (৭) আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এই কিতাবটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বাে। (৮) যথাসম্ভব ওযু সহকারে এবং কিবলামুখী হয়ে পাঠ করবাে। (৯) যেখানে যেখানে আল্লাহ তায়ালার নাম আসবে সেখানে “أزواجال” এবং (১০) যেখানে যেখানে “নবী”র নাম মােবারক আসবে সেখানে “(ﷺ)” পাঠ করবাে। (১১) (নিজের ব্যক্তিগত কপিতে) প্রয়ােজনে বিশেষ বিশেষ স্থানে আন্ডার লাইন করবাে। (১২) অপরকে এই কিতাবটি পাঠ করার উৎসাহ প্রদান করবাে। (১৩) এই হাদীসে পাক “একে অপরকে উপহার দাও, পরস্পর ভালবাসা বৃদ্ধি পাবে।” (মুওয়াত্তা ইমাম মালেক, ২য় খন্ড, ৪০৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-১৭৩১) এর উপর আমলের নিয়্যতে (একটি বা সামর্থ অনুযায়ী) এই কিতাব ক্রয় করে অন্যান্যদেরকে উপহার স্বরূপ প্রদান করবাে। (১৪) কিতাবের লিখনী ইত্যাদিতে শরয়ী কোন ভুল-ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে তা লিখিতভাবে অবহিত করব। (প্রকাশক ও লিখককে কিতাবের ভুলত্রুটি শুধুমাত্র মুখে বলাতে তেমন কোন উপকার হয় না।)
আল মদীনাতুল ইলমিয়া শায়খে তরীকত, আমীরে আহলে সুন্নাত, দাওয়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা হযরত আল্লামা মাওলানা আবু বিলাল মুহাম্মদ ইলইয়াস আত্তার কাদেরী রযবী যিয়ায়ী এর পক্ষ থেকে:
আশিকানে রাসূল (ﷺ)-এর মাদানী সংগঠন দাওয়াতে ইসলামী নেকীর দাওয়াত, সুন্নাতের পুনর্জাগরণ এবং ইলমে শরীয়াতকে সারা দুনিয়ায় প্রসারের সুদৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। এসকল কার্যাবলীকে সুচারুরূপে সম্পাদন করার জন্য কিছু মজলিশ (বিভাগ) গঠন করা হয়েছে। তন্মধ্যে একটি মজলিশ হলাে ‘আল মদীনাতুল ইলমিয়া। যা দাওয়াতে ইসলামীর সম্মানিত ওলামা ও মুফতীগণের  সমন্বয়ে গঠিত। এটা বিশেষ করে শিক্ষা, গবেষণা ও প্রচার ও প্রকাশনামূলক কাজের গুরুদায়িত্ব হাতে নিয়েছে। এতে নিম্নের ৬টি বিভাগ রয়েছে। যথা:
১. আ’লা হযরতের কিতাব বিভাগ (শােবায়ে কুতুবে আ’লা হযরত) ২. পাঠ্য পুস্তক বিভাগ (শােবায়ে দরসি কুতুব) ৩. সংশােধন মূলক কিতাবাদি বিভাগ (শােবায়ে ইছলাহী কুতুব) ৪. কিতাব অনুবাদ বিভাগ (শােবায়ে তারাজিমে কুতুব) ৫. কিতাব নিরীক্ষণ বিভাগ (শােবায়ে তাফতীশে কুতুব) ৬. তথ্যসূত্র নিরুপণ বিভাগ (শােবায়ে তাখরীজ)
‘আল মদীনাতুল ইলমিয়া’র সর্বপ্রথম প্রধান কাজ হচ্ছে আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, আযীমুল বরকত, আযীমুল মারতাবাত, পরওয়ানায়ে শময়ে রিসালত, মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত, হামিয়ে সুন্নাত, মাহিয়ে বিদআত, আলিমে শরীয়াত, পীরে তরীকত, বাইছে খাইরাে বারাকাত, হযরত আল্লামা মাওলানা আলহাজ্ব আল হাফেজ আল ক্বারী ইমাম আহমদ রযা খাঁন رضي الله عنه এর দুর্লভ ও মহামূল্যবান কিতাবাদিকে বর্তমান যুগের চাহিদানুযায়ী যথাসাধ্য সহজ সবলীল ভাষায় পরিবেশন করা। সকল ইসলামী ভাই ও
ইসলামী বােনেরা এই শিক্ষা, গবেষণা ও প্রচার-প্রকাশনামূলক মাদানী কাজে সবধরনের সর্বাত্মক সহায়তা করুন। আর মজলিশের পক্ষ থেকে প্রকাশিত কিতাবগুলাে স্বয়ং নিজেরাও পাঠ করুন এবং অন্যদেরকেও পড়তে উদ্বুদ্ধ করুন।
আল্লাহ তায়ালা দাওয়াতে ইসলামীর ‘আল মদীনাতুল ইলমিয়া মজলিশ সহ সকল মজলিশকে দিন দিন উন্নতি ও উৎকর্ষতা দান করুক। আর আমাদের প্রতিটি ভাল আমলকে ইখলাছের সৌন্দর্য দ্বারা সুসজ্জিত করে উভয় জাহানের মঙ্গল অর্জনের ওসিলা করুক। আমাদেরকে সবুজ গম্বুজের নিচে শাহাদাত, জান্নাতুল বাকীতে দাফন এবং জান্নাতুল ফিরদাউসে স্থান দান করুক।

▪প্রথমে এটি পড়ে নিন! এক ব্যক্তি হুযুর নবী করীম ﷺ এর নিকট উত্তম চরিত্র সম্পর্কে জানতে চাইলেন, তখন নবী করীম ﷺ এই আয়াতে মােবারাকাটি তিলাওয়াত করলেন:

▪ কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদঃ হে মাহবুব!  ক্ষমা করে দেওয়ার পথ অবলম্বন করুন।
সৎ কাজের আদেশ দিন। মুর্খদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখুন।(পারা ৯, সূরা আরাফ, আয়াত ১৯৯)
অতঃপর ইরশাদ করলেন: “উত্তম চরিত্র হলাে যে, তুমি সম্পর্ক ছিন্নকারীদের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করাে, যে তােমাকে বঞ্চিত করবে, তাকে দান করাে এবং যে তােমার উপর অত্যাচার করবে, তাকে ক্ষমা করে দাও।”

তথ্যসূত্রঃ ইহইয়াউ উলুমিদ্দীন, কিতাবু রিয়াযাতিন নাফস, বয়ান ফযীলাতু হুসনিল খুলুক,৩য় খন্ড, ৬১ পৃষ্ঠা।

হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে মােবারক رضي الله عنه বলেন: “হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা, অত্যধিক উপকার সাধন করা এবং কাউকে কষ্ট না দেওয়ার নামই হলাে উত্তম চরিত্র।”

তথ্যসূত্রঃসুনানে তিরমিযী, কিতাবুল বিররে ওয়াস সিলা, বা'বু মাজা ফি হুসনিল খুলুক, ৩/৪০৪, হাদীস নং- ২০১২

প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আমাদের প্রিয় আক্বা ﷺ এর শুভাগমনের আরেকটি উদ্দ্যেশ্য এটাও যে, মানুষের চরিত্র ও আচর-আচরণকে পরিশুদ্ধ করা। তাদের মধ্য থেকে মন্দ চরিত্রের মূল উৎপাটন করা এবং তাদের মাঝে উত্তম চরিত্র সৃষ্টি করা। যেমনিভাবে প্রিয় নবী (ﷺ) তাঁর কথা ও কাজ দ্বারা সমস্ত উত্তম চরিত্রের রূপরেখা প্রণয়ন করে দিয়েছেন এবং সারা জীবন ও জীবনের প্রতিটি স্তরে তা বাস্তবায়ন করেছেন আর যে কোন অবস্থায় এর উপর অটল থাকার উপদেশ দিয়েছেন।উত্তম চরিত্রের নেয়ামত শুধুমাত্র সৌভাগ্যবানদেরই অর্জিত হয়ে থাকে এবং আল্লাহ তায়ালার একটি বিশেষ নেয়ামত, উত্তম চরিত্রে কল্যাণই কল্যাণ, পক্ষান্তরে অসৎ চরিত্রে ক্ষতি আর ক্ষতি। কেউ খুব সুন্দর বলেছেন:
"হে ফালাহ ও কামরানী নরমী ও আসানী মে
হার বনা কাম বিগড় জাতে হেঁ নাদানী মে"

এই ‘উত্তম চরিত্র কিতাবটি ইসলামী দুনিয়ার মহান মুহাদ্দিস হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আবু কাসিম সুলায়মান বিন আহমদ তাবারানী رضي الله عنه এর লিখিত গ্রন্থ ‘মাকারিমুল আখলাক’ এর অনুবাদ যাতে সায়্যিদুনা ইমাম তাবারানী رضي الله عنه চরিত্রের বিভিন্ন বিভাগ সম্পর্কে বিভিন্ন হাদীসে মােবারাকা একত্রিত করেছেন। নিশ্চিতভাবে আশা করা যায় যে, এই কিতাবটি দিন-রাত ইনফিরাদী কৌশিশে লিপ্ত ইসলামী ভাইদের জন্য অত্যন্ত উপকারী হিসেবে বিবেচিত হবে।সুতরাং উত্তম চরিত্র গঠনে এবং আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূল (ﷺ)এর আনুগত্যে দৃঢ়তা পেতে এবং “নিজের এবং সারা দুনিয়ার মানুষের সংশােধনের চেষ্টার পবিত্র প্রেরণাকে উজ্জীবিত করতে নিজেও কিতাবটি অধ্যয়ন করুন আর সামর্থ্য অনুযায়ী মাকতাবাতুল মদীনা থেকে উপযুক্ত মূল্যে সংগ্রহ করে অন্যদেরকে উপহার স্বরূপ প্রদান করুন। এই অনুবাদে যা যা সৌন্দর্য বিদ্যমান রয়েছে তা নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর প্রিয় হাবীব ﷺ এর দান, আউলিয়ায়ে কেরামগণের رضي الله عنه দয়া এবং শায়খে তরীকত, আমীরে আহলে সুন্নাত, দাওয়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা হযরত আল্লামা মাওলানা আবু বিলাল মুহাম্মদ ইলইয়াস আত্তার কাদেরী دَامَت بَرَکاتُہُمُ الْعَالِیَہ এর আন্তরিক দোয়ারই ফসল আর যা যা অপূর্ণতা ও ভুলত্রুটি রয়েছে তা আমাদেরই অলসতা ও স্বল্পজ্ঞানের কারণে।

অনুবাদ করতে গিয়ে নিচের বিষয়াদির প্রতি বিশেষ ভাবে সজাগ দৃষ্টি রাখা হয়েছে:
➡সহজ ও প্রচলিত প্রবাদ অনুবাদ করা হয়েছে,যাতে অল্প-শিক্ষিত ইসলামী ভাইয়েরাও বুঝতে পারে।
➡আয়াতে মােবারাকার অনুবাদ আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, শাহ ইমাম আহমদ রযা  খাঁন رضي الله عنه এর অনুবাদ গ্রন্থ ‘কানযুল ঈমান থেকে নেওয়া হয়েছে।
➡আয়াতে মােবারাকার বরাত তাছাড়া হাদীস ও বাণীসমূহের উৎস সম্পর্কেও যথাসাধ্য বিবরণ দেওয়া হয়েছে।
➡বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়ােজনীয় ও উপকারী টীকা লিখে দেওয়া হয়েছে।
➡ আরবী ইবারতে এরাবও দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
➡ কঠিন শব্দগুলাের অর্থ ব্রাকেটের (....) মধ্যে লিখে দেওয়া হয়েছে।
➡বিভিন্ন যতিচিহ্নগুলাের প্রতিও খেয়াল রাখা হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া হলাে, আমাদেরকে “নিজের এবং সারা দুনিয়ার মানুষের সংশােধনের চেষ্টা করার জন্য মাদানী ইনআমাতের উপর আমল এবং মাদানী কাফেলায় সফর করার তৌফিক দান করুক আর দাওয়াতে ইসলামীর আল মদীনাতুল ইলমিয়া মজলিশসহ সকল মজলিশকে উত্তরােত্তর উন্নতি দান করুক।

কুরআনে করীমের ফযীলত:প্রিয় নবী (ﷺ) ইরশাদ করেন: “এই কোরআনে করীম আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আতিথেয়তা স্বরূপ, অতএব তােমরা নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী তাঁর আতিথেয়তা গ্রহণ করাে। নিঃসন্দেহে কোরআনে মজীদ আল্লাহ তায়ালার মজবুত রশি, স্পষ্ট নূর, উপকারী আরােগ্য, যে তা গ্রহণ করলাে তার জন্য ঢাল স্বরূপ এবং যে এর উপর আমল করে তার জন্য মুক্তি স্বরূপ। এটি সত্য থেকে বিচ্যুত হয় না যেন, এর পরিনতির জন্য ক্লান্ত হতে হবে আর এটি বক্র পথ নয় যে, তা সােজা করতে হয়। এর উপকারীতা শেষ হবার নয় এবং অধিকহারে তিলাওয়াতের কারণে পুরাতন হয় না (অর্থাৎ নিজ অবস্থায় প্রতিষ্ঠিত থাকে)। অতএব তােমরা এর তিলাওয়াত করাে, আল্লাহ তায়ালা তােমাকে প্রতিটি হরফ তিলাওয়াতের জন্য দশটি করে নেকী দান করবেন। আমি বলছিনা যে, "আলিফ লাম মিম" একটি হরফ বরং "আলিফ"একটি হরফ, " লাম" একটি হরফ এবং "মিম"একটি হরফ।”

তথ্যসূত্রঃআল মুস্তাদরাক, ২য় খন্ড, ২৫৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-২০৮৪)

▶লেখক পরিচিতি নাম ও বংশ:
তাঁর নাম মােবারক হলাে সুলায়মান বিন আহমদ বিন আয়ুব মুতীর লাখামী তাবারানী। উপনাম আবু কাসিম আর তিনি ইমাম তাবারানী নামেই প্রসিদ্ধ।
▶সৌভাগ্য মন্ডিত জন্ম:
২৬০ হিজরির সফরুল মুযাফফরে তাবারিয়ায় জন্ম গ্রহণ করেন।

▶শিক্ষা জীবন:
তিনি رضي الله عنه বাল্যকাল থেকেই শিক্ষা অর্জন করা শুরু করেছিলেন। অতএব তাবারিয়ায় হযরত সায়্যিদুনা আহমদ বিন মাসউদ মিকদাসী رضي الله عنه এর কাছ থেকে হাদীস শ্রবণ করার সময় তাঁর বয়স শরীফ ছিলাে ১৩ বৎসর। অতঃপর সিরিয়া চলে যান, সেখানে তিনি رضي الله عنه ইলমে হাদীসের অভিজ্ঞ মুহাদ্দিসগণের নিকট হাদীস শিক্ষা গ্রহণ করেন, অতঃপর ২৮০ হিজরিতে মিসরে সফর করেন এবং ২৮২ হিজরিতে ইয়ামেন গমন করেন। ২৮৩ হিজরিতে মদীনা মুনাওয়ারা চলে আসেন। অতঃপর মক্কা মুকাররমা হয়ে পুনরায় ইয়ামেনে চলে আসেন। ২৮৫ হিজরিতে মিসরে ফিরে আসেন এবং ২৮৭ হিজরিতে ইরাক সফর করেন। এসব সফরের সময় কিছুদিন হাদীস শরীফের ইমামদের কাছ থেকে হাদীস শুনার সৌভাগ্য অর্জন করেন। অতঃপর পারস্যে স্থানান্তরিত হয়ে যান এবং জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করেন।

▶শিক্ষকবৃন্দ:
হযরত সায়্যিদুনা ইমাম যাহাবী رضي الله عنه ‘তাযকিরাতুল হুফফাজে’ লিখেন: “হযরত সায়্যিদুনা সুলাইমান বিন আহমদ তাবরানী رضي الله عنه এর ওস্তাদগণের সংখ্যা এক হাজারেরও বেশি।” হযরত সায়্যিদুনা ইমাম তাবারানী رضي الله عنه এর শাগরেদ হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আবু নাঈম ইসফাহানী رضي الله عنه ‘হিলিয়াতুল আউলিয়া" কিতাবে বলেন: “তিনি رضي الله عنه এ অসংখ্য বড় বড় পূর্ববর্তী ওলামা থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। কতিপয় প্রসিদ্ধ মাশায়িখের নাম হলো
১২ জন ১)হযরত সায়্যিদুনা আলী ইবনে আবদুল আযীয বাগাবী ২)হযরত সায়্যিদুনা আবু মুসলিম কাশী ৩) হযরত সায়্যিদুনা মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ হারামী ৪)হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ বিন আহমদ বিন হাম্বল ৫)হযরত সায়্যিদুনা ইসহাক বিন ইব্রাহীম দাবরী ৬)হযরত সায়্যিদুনা ইউসুফ বিন এয়াকুব কাযী এবং ৭) হযরত সায়্যিদুনা মুহাম্মদ বিন ওসমান বিন আবি শায়বা (رضي الله عنه)

▶ছাত্রবৃন্দ:
অসংখ্য জ্ঞান-পিপাসু তাঁর জ্ঞানের সমুদ্র থেকে নিজের পিপাসা নিবারণ করেছেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের নাম হলাে: ১) হযরত সায়্যিদুনা হাফিয আহমদ বিন মুসা বিন মুর্দবিয়া ২) হযরত সায়্যিদুনা হাফিয মুহাম্মদ বিন আহমদ বিন আহমদ জারূদী ৩) হযরত সায়্যিদুনা হাফিয মুহাম্মদ বিন ইসহাক বিন মুহাম্মদ বিন ইয়াহইয়া ইসবাহানী এবং ৪)হযরত সায়্যিদুনা হাফিয মুহাম্মদ বিন আবু আলী আহমদ বিন আব্দুর রহমান হামদানী যাকওয়ানী (رضي الله عنه) তাছাড়া তাঁর কতিপয় শায়খও তাঁর কাছ থেকে রেওয়ায়াত গ্রহণ করেছেন।

▶রচনা ও সংকলন
তিনি رضي الله عنه অসংখ্য কিতাব রচনা করেছেন। তন্মধ্যে কয়েকটির নাম হলাে: ১) আল মুজামুল কবীর ২) আল মুজামুল আওসাত ৩) আল মু’জামুস সগীর ৪)(এই কিতাব) মাকারিমুল আখলাক ৫)কিতাবুল আওয়ায়িল ৬)কিতাবুল আহাদীসিত তিওয়াল ৭) কিতাবুদ দোয়া।

▶প্রশংসা মূলক বাণী:
হযরত সায়্যিদুনা ইমাম সামআনী رضي الله عنه ‘আল আনসাব' কিতাবে লিখেন: “হযরত সায়্যিদুনা ইমাম তাবারানী رضي الله عنه আপন যুগের হাফিযুল হাদীস ছিলেন। ইলমে হাদীস অর্জনের জন্য বিভিন্ন দেশে সফর করেছেন এবং অসংখ্য শায়খের সাথে সাক্ষাত করেছেন আর হাফিযে হাদীসগণের কাছ থেকে পরামর্শও নিয়েছেন। অতঃপর জীবনের শেষ প্রান্তে ইসবাহানে গিয়ে বসতি স্থাপন করেন এবং অসংখ্য কিতাব রচনা করেন।”
হযরত সায়্যিদুনা ইমাম ইবনে আসাকির رضي الله عنه ‘তারীখে দামেশক'কিতাবে লিখেন: “হযরত সায়্যিদুনা ইমাম তাবারানী رضي الله عنه ছিলেন অসংখ্য হাদীস হিফযকারী এবং হাদীস সংগ্রহের জন্য সফরকারীদের মধ্যে অন্যতম।”
হযরত সায়্যিদুনা ইমাম ইবনে ইমাদ رضي الله عنه ‘শাযরাতুয যাহাব’ কিতাবে লিখেন: “হযরত সায়্যিদুনা ইমাম তাবারানী رضي الله عنه নির্ভরযােগ্য এবং সত্যিকার মুহাদ্দিস ছিলেন। অত্যন্ত মেধাবী এবং আলাল ও রিজাল হাদীস এবং অধ্যায় সম্বন্ধে অত্যন্ত পাণ্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন।”

▶ওফাত:
ইলম ও আমলের এই অনুপম আদর্শরূপী ব্যক্তিত্ব জ্ঞানের মুক্তো ছড়াতে এবং জ্ঞান পিপাসুদের পিপাসা নিবারণ করাতে করাতে ৩৬০ হিজরি সনের জিলকদ মাসে এই নশ্বর জগত থেকে অবিনশ্বর জগতের দিকে গমন করেন।
(আল্লাহ পাকের রহমত তাঁর উপর বর্ষিত হােক আর তাঁর সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক, আমিন)

দাওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনার প্রকাশিত ৫৪ পৃষ্ঠা সম্বলিত কিতাব “নসিহতোঁ কে মাদানী ফুল বাওসিলায়ে আহাদীসে রাসূল (ﷺ)”এর ৫১-৫২ পৃষ্ঠায় রয়েছে: আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন:  হে আদম সন্তান! যে হেসে হেসে গুনাহ করে, আমি তাকে কাঁদিয়ে কাঁদিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবাে এবং যে আমার ভয়ে কান্না করতে থাকে, আমি তাকে খুশি করে জান্নাতে প্রবেশ করাবাে। হে আদম সন্তান! কতাে ধনী ব্যক্তির অবস্থা, এমন হবে, যারা হিসাব নিকাশের দিন অপারগতা ও দ্রারিদ্রতার আকাংখা করবে। কতাে নির্দয় ব্যক্তির অবস্থা এমন হবে, মৃত্যু তাদেরকে অপমানিত ও অপদস্থ করে দিবে। কতাে মিষ্ট জিনিসের অবস্থা এমন হবে, মৃত্যু থাকে তিক্ত করে দিবে। নিয়ামত সমূহের উপর অনেক আনন্দ প্রকাশের অবস্থা এমন হবে, যাকে মৃত্যু মেঘাচ্ছন্ন করে দিবে। অনেক আনন্দ প্রকাশের অবস্থা এমন হবে, যা এরপরে দীর্ঘ কষ্টে লিপ্ত করিয়ে দিবে।

তথ্যসূত্রঃমজমুআতু রাসাইল আল ইমাম গাযালী, ৫৭৭ পৃষ্ঠা)।

কোরআন মজীদের তিলাওয়াত, অধিকহারে আল্লাহর যিকির, মুখের কুফলে মদীনা, মিসকিনদের প্রতি ভালবাসা ও
তাদের সাথে মেলামেশা করার ফযীলত ১ঃ

হযরত সায়্যিদুনা আবু যর গিফারী رضي الله عنه বর্ণনা করেন, আমি হুযুর পুরনূর ﷺ কে আরয করলাম: “ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ﷺ আমাকে কিছু উপদেশ দিন।” হুযুর ﷺ ইরশাদ করলেন: “আমি তােমাকে আল্লাহকে ভয় করার উপদেশ দিচ্ছি। নিঃসন্দেহে এটি তােমার দ্বীনের (ধার্মিকতার) মূল।” আমি আরয করলাম: “আরাে কিছু উপদেশ দিন।” ইরশাদ করলেন: “কোরআন মজীদের তিলাওয়াত এবং অধিকহারে আল্লাহর যিকির করাে, কেননা তা তােমার জন্য আসমান এবং জমিনে নূর হবে।” আমি আরয করলাম: “ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ﷺ আমাকে আরাে কিছু উপদেশ দিন।” ইরশাদ করলেন: “জিহাদ করাকে নিজের উপর অপরিহার্য করে নাও, কেননা তা আমার উম্মতদের জন্য রাহবানিয়াত স্বরূপ।”আমি আরয করলাম: “ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ﷺ আরাে কিছু নসিহত করুন।” ইরশাদ করলেন: “কম হাসবে, কেননা অধিক হাসি অন্তরকে মৃত এবং চেহারাকে অনুজ্জ্বল করে দেয়।” আমি আরয করলাম: “আরাে উপদেশ দিন।” ইরশাদ করলেন: “ভাল কথা বলা ব্যতিত নিরব থাকবে, কেননা নিরবতা শয়তানের বিরুদ্ধে ঢাল স্বরূপ আর দ্বীনি কাজে তােমার জন্য সহায়ক।”
আমি আরয করলাম: “আরাে কিছু নসিহত করুন।” ইরশাদ করলেন: “(দুনিয়াবী বিষয়ে) তােমার চেয়ে নগন্যকে দেখাে, উত্তমদের দিকে দেখাে না, কেননা এই আমলটি তা থেকে উত্তম যে, তুমি আল্লাহ পাকের নেয়ামতকে তুচ্ছ মনে করবে।” আমি আরয করলাম: ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ﷺ আরাে কিছু নসিহত করুন। ইরশাদ করলেন: “অভাবীদেরকে ভালবাসাে আর তাদের সংস্পর্শ অবলম্বন করাে।” আমি আরয করলাম:ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ﷺ আরাে কিছু ইরশাদ করুন। ইরশাদ করলেন: “সত্য কথা বলাে, যদিও তা তিক্ত হয়।” আমি আরয করলাম: ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ﷺ আরাে কিছু নসিহত করুন। ইরশাদ করলেন: “আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখাে, যদিওবা তারা তােমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে।” আমি আর করলাম; ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ﷺ আরাে কিছু নসিহত করুন। ইরশাদ করলেন: “আল্লাহ পাকের ব্যাপারে কারাে নিন্দাকে ভয় করাে না।” আমি আরয করলাম: “আরাে কিছু নসিহত করুন।” ইরশাদ করলেন: “মানুষের জন্যও তা-ই পছন্দ করাে, যা নিজের জন্য পছন্দ করাে।” অতঃপর হুযুর ﷺ তাঁর হাত মােবারক আমার বুকে রাখলেন এবং ইরশাদ করলেন: “হে আবু যর! তদবীরের চাইতে কোন বুদ্ধিমত্তা নেই, গুনাহ্ থেকে বাঁচার চাইতে কোন পরহেযগারী নেই আর উত্তম চরিত্রের চাইতে কোন আভিজাত্য নেই।

তথ্যসূত্রঃআত তারগীব ওয়াত তারহীব, কিতাবুল কাযা, হাদীস নং- ২৪, ৩/১৩১।

▪"অধিকহারে ইবাদত ও রিয়াযত করা এবং লোকজন থেকে দূরে থাকাকে রাহবানিয়াত বলে"

▶উত্তম চরিত্রের ফযীলত ২ঃ
আমীরুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদুনা আলী মুরতাদ্বা থেকে বর্ণিত, হুযুর নবীয়ে আকরাম, নূরে মুজাসসাম ﷺ ইরশাদ করেন: “নিশ্চয় বান্দা উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে দিনের বেলায় রােযা এবং রাতের বেলায় নামাযে রত ব্যক্তিদের মর্যাদা পেয়ে যায়, আবার কখনাে বান্দাকে অহংকারী ও অবাধ্য বলে লিখে দেওয়া হয়, অথচ সে নিজেদের পরিবারের সদস্য ব্যতীত অন্য কিছুরই মালিক নয়।”

তথ্যসূত্রঃমু'জামুল আওসাত, হাদীস নং- ৬২৭৩-৬২৮৩, ৪/৩৬৯-৩৭২

▶৩) উম্মুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দীকা  رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, নবীয়ে আকরাম ﷺ ইরশাদ করেন: “বান্দা উত্তম চরিত্রের কারণে তাহাজ্জুদ আদায়কারী এবং প্রচন্ড গরমের দিনে রােযা রাখার কারণে পিপাসার্ত থাকা ব্যক্তির মর্যাদা লাভ করেন।”

তথ্যসূত্রঃআল ওস্তাযু কার লিল কুরবাতি, বাবু মাজা ফি হুসনিল খুলুক, হাদীস নং- ১৬৭২, ৮/২৭৯

▶৪)হযরত সায়্যিদুনা আবু দারদা رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, নবী করীম রউফুর রহীম ﷺ ইরশাদ করেন: “আমলের মীযানে (পাল্লায়) উত্তম চরিত্রের চেয়ে ভারী আমল আর কোনটিই নয়।”

তথ্যসূত্রঃসুনানে আবু দাউদ, বাবু ফি হুসনিল খুলুক, হাদীস নং- ৪৭৯৯, ৪/৩২।

▶৫)হযরত সায়্যিদুনা জাবির رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, হুযুর নবী করীম রউফুর রহীম ﷺ ইরশাদ করেন: “আমি কি তােমাদেরকে তােমাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি সম্পর্কে জানাবাে না?” আমরা আরজ করলাম: “কেন নয়!” ইরশাদ করেন: “সেই ব্যক্তি, যে তােমাদের মধ্যে উত্তম চরিত্রের অধিকারী।

তথ্যসূত্রঃআত তারগীব ওয়াত তারহীব, কিতাবুল আদব, হাদীস নং- ৪০৭১, ৩/৩৩০।

▶৬) হযরত সায়্যিদুনা জাবির رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, নবীদের সুলতান, রহমতে আলমিয়ান ﷺ ইরশাদ করেন: “কিয়ামতের দিন তােমাদের মধ্য থেকে আমার সর্বাধিক প্রিয় এবং আমার মজলিসের অধিক নিকবর্তী সে-ই হবে, যে ব্যক্তি উত্তম চরিত্রের অধিকারী ও বিনয় অবলম্বনকারী হবে, সে লােকজনকে এবং লােকজন তাকে ভালবাসে আর তােমাদের মধ্যে আমার সর্বাধিক অপছন্দের এবং আমার মজলিস থেকে দূরে সেই লােক থাকবে, যে বাচাল, বক বক কারী এবং অহংকারকারী
হবে।”

তথ্যসূত্রঃসুনানে তিরমিযী, কিতাবুল বিররে ওয়াস সিলাহ, হাদীস নং- ২০২৫, ৩/৪০৯।

▶৭) হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, হুযুরে আকরাম, নূরে মুজাসসাম ﷺ ইরশাদ করেন: “আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন: আমি বান্দাদেরকে আমার জ্ঞান দ্বারা সৃষ্টি করেছি। অতএব, আমি যার কল্যাণ চাই, তাকে উত্তম চরিত্র দান করি এবং যার অকল্যাণ চাই, তাকে মন্দ চরিত্র প্রদান করি।”

তথ্যসূত্রঃজামেউল আহাদীস, হরফুল কাফ মাআল আলিফ, হাদীস নং- ১৫১২৯, ৫/৩২৫।

৮)হযরত সায়্যিদুনা জাবির বিন সামুরা رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, নবী করীম, রউফুর রহীম ﷺ ইরশাদ করেন: “মুসলমানদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম সেই ব্যক্তি, যার চরিত্র সবার চেয়ে উত্তম।”

তথ্যসূত্রঃআল মুসনাদ লিল ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, হাদীসে জাবির বিন সামুরা, হাদীস নং- ২০৮৭৪, ৭/৪১০

▶৯)হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, মক্কী মাদানী মুস্তফা ﷺ ইরশাদ করেন: “পরিপূর্ণ মুমিন সেই, যার চরিত্র সবচেয়ে বেশি উত্তম।”

তথ্যসূত্রঃসুনানে আবু দাউদ, কিতাবুস সুন্নাহ, হাদীস নং- ৪৬৮২, ৪/২৯০।

১০)হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা  رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, হুযুর পুরনূর ﷺ ইরশাদ করেন: “আল্লাহ তায়ালা যে বান্দার আকৃতি ও চরিত্রকে উত্তম বানিয়েছেন, তাকে আগুন গ্রাস করবে না।”

তথ্যসূত্রঃশুয়াবুল ঈমান লিল বায়হাকী, বাবু ফি হুসনিল খুলুক, হাদীস নং- ৮০৩৮, ৬/২৪৯

১১) হযরত সায়্যিদুন আবু হুরায়রা رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, হুযুর নবীয়ে আকরাম, নূরে মুজাসসাম ﷺ ইরশাদ করেন: “উত্তম চরিত্র গুনাহসমূহকে এমনভাবে বিগলিত করে দেয়, যেভাবে সূর্যের তাপ বরফকে বিগলিত করে দেয়।”

তথ্যসূত্রঃশুয়াবুল ঈমান লিল বায়হাকী, বাবু ফি হুসনিল খুলুক, হাদীস নং- ৮০৩৬, ৬/২৪৭।

১২)হযরত সায়্যিদুনা উসামা বিন শুরাইক رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, সাহাবায়ে কেরামগণ رضي الله عنه প্রিয় নবী (ﷺ) এর দরবারে আরয করলেন: “ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ﷺ মানুষকে সবচেয়ে উত্তম কোন্ জিনিসটি দান করা হয়েছে?” হুযুর ﷺ ইরশাদ করলেন: “মানুষকে উত্তম চরিত্রের চাইতে বেশি উত্তম কোন জিনিসই দান করা হয়নি।”

তথ্যসূত্রঃমুজামুল কবীর, হাদীস নং- ৪৬৩, ১/১৭৯

১৩)হযরত সায়্যিদুনা আবু যর গিফারী  رضي الله عنه বর্ণনা করেন, নবী করীম, রউফুর রহীম ﷺ আমাকে নসিহত করেন,“যেখানেই থাকো না কেন আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করতে থাকো এবং গুনাহ সংগঠিত হয়ে গেলে তবে সাথে সাথে নেকী করে নাও, কেননা তা গুনাহকে মিটিয়ে দিবে আর মানুষের সাথে উত্তম আচরণ করাে।”

তথ্যসূত্রঃ মু'জামু আওসাত, হাদীস নং- ৮৩৭, ১/২৪৪

নম্র স্বভাব, সচ্চরিত্র ও বিনয়ের ফযীলতঃ
১৪) হযরত সায়্যিদুনা জাবির  رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, নবী করীম, রউফুর রহীম ﷺ ইরশাদ করেন: “আমি কি তােমাদেরকে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বলবাে না, যার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম? যে নম্র স্বভাব, কোমল ভাষী, মানুষকে মার্জনাকারী এবং চাহিদা পূরণকারী হবে।”

তথ্যসূত্রঃমু'জামু আওসাত, হাদীস নং- ৮৩৭, ১/২৪৪

১৫) হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, হুযুর নবী পাক ইরশাদ করেন: “মুমিন এতই নম্র স্বভাব, কোমল ভাষী হয়ে থাকে যে, তার নম্রতার কারণে লােকেরা তাকে বােকা মনে করে।

তথ্যসূত্রঃশুয়াবুল ঈমান লিল বায়হাকী, বাবু ফি হুসনিল খুলুক, হাদীস নং- ৮১২৭, ৬/২৭২

১৬) হযরত সায়্যিদুনা ইরবায বিন সারিয়া رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, হুযুর নবী করীম ﷺ ইরশাদ করেন: “মুমিন লাগামবিশিষ্ট উটের ন্যায় হয়ে থাকে, কেননা যদি তাকে বেঁধে রাখা হয় সে দাঁড়িয়ে থাকে আর যদি চালানাে হয় তবে চলতে থাকে এবং কোন কংকরময় জায়গায় বসানাে হয়, তবে বসে যায়।

তথ্যসূত্রঃসুনানে ইবনে মাজাহ, কিতাবুস সুন্নাহ, হাদীস নং- ৪৩, ১/৩২। তাফসীরে রুহুল বয়ান, ফোরকান, ৬৩ নং আয়াতের পাদটিকা, ৬/২৪০

১৭) হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, নবীয়ে রহমত, শফীয়ে উম্মত ﷺ ইরশাদ করেন: “সেই ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ, যে ব্যক্তি কোন ভুল-ত্রুটি না করা সত্ত্বেও বিনয় করে এবং সুসংবাদ সেই ব্যক্তির জন্য, যে ব্যক্তি জ্ঞান ও প্রজ্ঞার অধিকারী আলেমদের সাথে মেলামেশা রাখে এবং অপদস্ত ও গুনাহ্গারদের থেকে দূরে থাকে। সুসংবাদ সেই ব্যক্তির জন্য, যে নিজের অতিরিক্ত সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে দেয় এবং অযথা কথাবার্তা থেকে বিরত থাকে। সুসংবাদ সেই ব্যক্তির জন্য, যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত অনুযায়ী চলে আর সুন্নাতকে ছেড়ে দিয়ে বিদআত গ্রহণ না করে।”

তথ্যসূত্রঃশুয়াবুল ঈমান লিল বায়হাকী, বাবু ফিম যুহু ওয়া কসরিল আমল, হাদীস নং- ১০৫৬৩, ৭/৩৫৫

মানুষের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করার ফযীলত

১৮)হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, মক্কী মাদানী মুস্তফা ﷺ ইরশাদ করেন: “তােমরা মানুষকে নিজেদের সম্পদ দ্বারা খুশি করতে পারবে না, কিন্তু তােমাদের হাসিমুখে সাক্ষাৎ এবং উত্তম চরিত্র তাদের খুশি করতে পারে।”

তথ্যসূত্রঃমুস্তাদরিক লিল হাকিম, কিতাবুল ইলম, হাদীস নং- ৪৩৫, ১/৩২৯।

১৯) হযরত সায়্যিদুনা জাবির বিন আব্দুল্লাহ্ رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, হুযুরে আকরাম নূরে মুজাসসাম ﷺ ইরশাদ করেন: “সর্বোত্তম সদকা হলাে, তুমি তােমার পাত্র থেকে পানি তােমার ভাইয়ের পাত্রে ঢেলে দাও আর তার সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করাে।”

তথ্যসূত্রঃসুনানে তিরমিযী, কিতাবুল বিররে ওয়াস সিলাহ আন রাসূলাল্লাহ্ ﷺ  হাদীস নং- ১৯৭৭, ৩/৩৯১।

মুসলমান ভাইয়ের জন্য মুচকি হাসির ফযীলত

২০) হযরত সায়্যিদুনা আবু যর গিফারী رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম ﷺ ইরশাদ করেন: “তােমার নিজের বালতি থেকে তােমার ভাইয়ের বালতি পূর্ণ করা সদকা। তােমাদের নেকীর নির্দেশ দেওয়া এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করাও সদকা। তােমাদের আপন মুসলমান ভাইয়ের জন্য মুচকি হাসা সদকা এবং তােমাদের কোন পথহারা ব্যক্তিকে পথ দেখিয়ে দেওয়াও সদকা।”

তথ্যসূত্রঃশুয়াবুল ঈমান লিল বায়হাকী, বাবু ফিয যাকাত, হাদীস নং- ৩৩২৮, ৩/২০৪

▶২১)হযরত সায়্যিদাতুনা উম্মে দরদা رضي الله عنه হযরত সায়্যিদুনা আবু দরদা رضي الله عنه সম্পর্কে বলেন: তিনি কথাবার্তার সময় মুচকি হাসতেন। আমি এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তরে বললেন: আমি নবী করীম ﷺ কে দেখেছি যে, তিনি ﷺ কথাবার্তা বলার সময় মুচকি হাসতে থাকতেন।”

তথ্যসূত্রঃতারিখে মদীনা দামেশক লি ইবনে আসাকির, নম্বর- ৫৪৬৪, ৪৭/১৮৭

২২) হযরত সায়্যিদুনা জাবির رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, যখন রাসুলে আকরাম শাহানশাহে বনী আদম ﷺ এর উপর ওহী অবতীর্ণ হতাে, তখন আমি বলতাম যে, হুযুর ﷺ জাতিকে ভীতি প্রদর্শন করবেন আর যখন ওহী অবতীর্ণ হতাে না, তখন প্রিয় নবী (ﷺ)মানুষের মাঝে সবচেয়ে বেশি মুচকি হাস্যোজ্জ্বল এবং উত্তম চরিত্র সম্পন্ন হতেন।”

তথ্যসূত্রঃআল কামিলু ফি দা ফায়ির রিজাল, নম্বর- ৪২/১৬৬৩, মুহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান বিন আবী লাইলী, ৭/৩৯৪।

নম্রতা ও সহনশীলতার ফযীলতঃ
২৩)হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ বিন মুগাফফাল رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, আল্লাহ তায়ালার প্রিয় হাবীব ﷺ ইরশাদ করেন: “নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা নম্রতা প্রদর্শনকারী এবং নম্রতাকেই ভালবাসেন আর তার জন্য যা কিছু দান করেন, তা কঠোরতার জন্য দান করেন না।”

তথ্যসূত্রঃসুনানে আবু দাউদ, কিতাবুল 'আদ, বাৰু ফির রিকাক, হাদীস নং- ৪৮০৭, ৪৩৩৪

২৪)উম্মুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দীকা رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, মদীনার তাজেদার, নবীদের সর্দার ﷺ ইরশাদ করেন: “আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক ব্যাপারে নম্রতাকেই পছন্দ করেন।”

তথ্যসূত্রঃ সহীহ বুখারী, কিতাবুল আদব, বাবুর রিকাক ফিল আমর কুলুহু, হাদীস নং- ৬০২৪, ৪/১০৬

২৫)হযরত সায়্যিদুনা আনাস বিন মালিক  رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, শাহানশাহে নবুয়ত, তাজেদারে রিসালাত ﷺ ইরশাদ করেন:“নম্রতা যে জিনিসে থাকে, সেটিকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে।”

তথ্যসূত্রঃমুসনাদিল বাশার, মুসনাদে আবী হামযা আনাস বিন মালিক, হাদীস নং- ৭০০২, ২৩২৯

২৬)উম্মুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দীকা رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, নবী করীম, রউফুর রহীম, রাসূলে আমীন ﷺ ইরশাদ করেন: “যখন আল্লাহ তায়ালা কোন পরিবারের কল্যাণের ইচ্ছা করেন, তখন তাদের (অন্তরে) ভালবাসা ও নম্রতা সৃষ্টি করে দেন।”

তথ্যসূত্রঃআল মুসনাদ লিইমাম আহমদ বিন হাম্বল, মুসনাদে আয়েশা, হাদীস নং- ৪৮০৭, ৪/৩৪

২৭) হযরত সায়্যিদুনা সাহাল বিন সা'আদ رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী (ﷺ) ইরশাদ করেন: “প্রশান্ত (স্থিরতা) আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আর তাড়াহুড়া (স্বভাব) শয়তানের পক্ষ থেকে।”

তথ্যসূত্রঃসুনানে তিরমিযী, কিতাবুল বিররে ওয়াস সিলাহ, বাবু মাজা ফির রিকাক, হাদীস নং- ২০১৯, ৩/৪০৭

২৮)হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, নবী করীম, রউফুর রহীম ﷺ ইরশাদ করেন: “মানুষের সম্মান হলাে তার দ্বীন, মনুষ্যত্ব হলাে তার বিবেক এবং আভিজাত্য হলাে তার চরিত্র।”

তথ্যসূত্রঃআল মুসনাদ লিইমাম আহমদ বিন হাম্বল, মুসনাদে আবী হুরায়রা, হাদীস নং- ৮৭৮২, ৩/২৯২।

২৯) হযরত সায়্যিদুনা আশজ আসরী  رضي الله عنه বলেন, উত্তম চরিত্রের আধার, নবীদের সরদার ﷺ আমাকে ইরশাদ করেন: “তােমার মধ্যে দুইটি অভ্যাস এমন, যা আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন, তা হচ্ছে সহনশীলতা আর প্রশান্তি (স্থিরতা)।” আমি আরয করলাম: “ইয়া রাসূলাল্লাহ ﷺ এই দুইটি গুণ কি আমি আমার মাঝে নিজে থেকে সৃষ্টি করেছি, নাকি আল্লাহ তায়ালা আমার মাঝে প্রকৃতিগত ভাবে তা সৃষ্টি করেছেন?” ইরশাদ করলেন: “না, বরং আল্লাহ তায়ালা তােমার প্রকৃতিতেই এই দুটি স্বভাব রেখেছেন।” অতঃপর আমি বললাম: “সমস্ত প্রশংসা সেই মহান প্রতিপালকের জন্য, যিনি আমার প্রকৃতিতে এই দুটি স্বভাব রেখেছেন, যে কারণে তিনি এবং তাঁর রাসূল ﷺ সন্তুষ্ট।”

তথ্যসূত্রঃআস সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, কিতাবুন নিকাহ, হাদীস নং-১৩৫৮৭, ৭/১৬৪

৩০) হযরত সায়্যিদাতুনা উম্মে সালমা رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম, নূরে মুজাসসাম (ﷺ) ইরশাদ করেন: “যার মাঝে তিনটি বিষয় থেকে কোন একটিও বিদ্যমান না থাকে, তবে সে যেনাে তার কোন আমলের সাওয়াবের আশা না রাখে: (১) এমন তাকওয়া যা হারাম কাজ থেকে বিরত রাখে (২) এমন সহিষ্ণুতা, যা তাকে পথভ্রষ্টতা থেকে বিরত রাখে (৩) উত্তম চরিত্র, যা দ্বারা সে মানুষের সাথে জীবন অতিবাহিত করে।”

তথ্যসূত্রঃশুয়াবুল ঈমান লিল বায়হাকী, বাবু ফি হুসনিল খুলুক, হাদীস নং- ৮৪২৪, ৬/৩৩৯।

ধৈৰ্য্য ও দানশীলতার ফযীলত ঃ

৩১)হযরত সায়্যিদুনা জাবির رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, তাজেদারে রিসালত, শফীয়ে উম্মত ﷺ ইরশাদ করেন: “(পরিপূর্ণ) ঈমান ধৈৰ্য্য ও দানশীলতারই নাম।”

তথ্যসূত্রঃআল মুসনাদ লি আবী ইয়ালা, মুসনাদে জাবির বিন আব্দুল্লাহ, হাদীস নং- ১৮৪৯, ২/২২০।

৩২)হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী রাসূলে আরবী ﷺ ইরশাদ করেন:ঐ মুমিন, যে মানুষের সাথে মেলামেশা করে এবং তাদের পক্ষ থেকে পাওয়া কষ্টে ধৈৰ্য্যধারণ করে, সে ঐ মুমিন থেকে উত্তম, যে মানুষের সাথে মেলামেশা করে না এবং তাদের পক্ষ থেকে পাওয়া কষ্টে ধৈৰ্য্যধারণ করে না।”

তথ্যসূত্রঃআস সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, কিতাবু আদাবিল কাযী, হাদীস নং- ২০১৭৫, ১০/১৫৩।

৩৩) হযরত সায়্যিদুনা জাবির বিন আব্দুল্লাহ  رضي الله عنه থেকে বর্ণিত,শাহানশাহে নবুয়ত, রাসূলুল্লাহ্ ﷺ ইরশাদ করেন: “যখন হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামকে জমিন ও আসমানে ভ্রমণ করানাে হলাে, তখন তিনি আলাইহিস সালাম  জনৈক ব্যক্তিকে গুনাহে লিপ্ত দেখে তার ধ্বংসের জন্য দোয়া করেন, অতএব তাকে ধ্বংস করে দেয়া হলাে। অতঃপর আরেক ব্যক্তিকে গুনাহে লিপ্ত দেখে তার বিরুদ্ধেও দোয়া করলেন, তখন আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রতি ওহী প্রেরণ করলেন: হে ইব্রাহীম! নিশ্চয় যে ব্যক্তি আমার অবাধ্যতা করলাে, সে আমারই বান্দা এবং তিনটি বিষয় থেকে যে কোন একটি বিষয় তাকে আমার গজব থেকে বাঁচিয়ে নিবে, হয়তাে সে তাওবা করে নিবে, তখন আমি তার তাওবা কবুল করবাে, নয়তাে সে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে, তখন আমি তাকে ক্ষমা করে দিবাে। অথবা তার বংশে এমন কোন ব্যক্তি জন্ম নিবে যে আমার ইবাদত করবে। হে ইব্রাহীম! তুমি কি জানে না যে, আমার নামসমূহের মধ্যে এমন একটি নামও রয়েছে যা হচ্ছে ‘আমি সবুর’ (অর্থাৎ অতিশয় সহনশীল)।”

তথ্যসূত্রঃআল মু'জামুল আওসাত, হাদীস নং-৭৪৭৫, ৫/৩২২।

৩৪)হযরত সায়্যিদুনা আবু মুসা আশআরী رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, নবীয়ে মুকাররাম, নূরে মুজাস্সাম ﷺ ইরশাদ করেন: “কোন কষ্টদায়ক কথা শুনে আল্লাহ তায়ালার চেয়ে অধিক ধৈৰ্যশীল আর কেউই নেই, কেননা মানুষ তাঁর প্রতি সন্তানের ইঙ্গিত করে, কিন্তু তবু আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেন এবং রিযিক দান করেন।”

তথ্যসূত্রঃসহীহ মুসলিম, কিতাবু সিফতুল কিয়ামাতি ওয়াল জান্নাতি ওয়ান নার, হাদীস নং- ২৮০৪, ১৫০৬ পৃষ্ঠা।

৩৫) হযরত সায়্যিদুনা আবু মাসউদ رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, যখন তােমরা আপন কোন মুসলমান ভাইকে গুনাহে লিপ্ত দেখবে, তখন তার বিরুদ্ধে শয়তানের সাহায্যকারী হয়ে যেও না যে, তােমার এরূপ বলবে: “আল্লাহ তায়ালা তােমাকে লাঞ্ছিত করুক, আল্লাহ তায়ালা তার অমঙ্গল করুক।” বরং এরূপ বলবে: “আল্লাহ তায়ালা তাকে তাওবা করার তৌফিক দান করুক এবং তাকে ক্ষমা করে দিক।”

তথ্যসূত্রঃমু'জামুল কবীর,হাদিস নং-৮১৫৪,৯/১১০

রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখার ফযীলত
৩৬) হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম, শাহে বনী আদম ﷺ ইরশাদ করেন: “শক্তিশালী সেই নয়, যে অন্যকে পরাজিত করে।” সাহাবায়ে কিরাম رضي الله عنه আর করলেন: “ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ﷺ তবে শক্তিশালী কে?” ইরশাদ করলেন: “ঐ ব্যক্তি, যে রাগের সময় নিজেকে নিজে নিয়ন্ত্রণে রাখে।”

তথ্যসূত্রঃসহীহ মুসলিম, কিতাবুল বিররে ওয়াস সিলাহ, হাদীস নং-২৬০৮, ১৪০৬ পৃষ্ঠা।

৩৭)হযরত সায়্যিদুনা আনাস رضي الله عنه বর্ণনা করেন যে, নবীয়ে রহমত, শফীয়ে উম্মত ﷺ কিছু লােকের পাশ দিয়ে গমন করলেন তখন দেখলেন যে, তারা পাথর উঠানাের প্রতিযােগিতা করছিলাে। হুযুর ﷺ ইরশাদ করলেন: “এখানে কী হচ্ছে?”লােকেরা আরয করলাে: “ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ﷺ এগুলাে সেই পাথর, যেগুলােকে আমরা জাহেলী যুগে শক্তিশালী ব্যক্তির পাথর বলতাম।” হুযুর ﷺ ইরশাদ করলেন: “আমি কি তােমাদেরকে তােমাদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি সম্পর্কে জানাবাে না? তােমাদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী সেই ব্যক্তি, যে রাগের সময় নিজেকে সবচেয়ে বেশি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।”

তথ্যসূত্রঃ জামেউল আহাদীস লিস সুয়ুতি, মুসনাদে আনাস বিন মালিক, হাদীস নং- ১৩০৮৭, ১৮/৪৯৩

৩৮)হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি প্রিয় নবী (ﷺ) এর দরবারে আরয করলাে: “ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ﷺ কোন জিনিসটি আমাকে আল্লাহ তায়ালার গযব থেকে বাঁচাতে পারে?” হুযুর ﷺ ইরশাদ করলেন: “রাগ পরিহার করাে।”

তথ্যসূত্রঃআল মুসনাদে লিইমাম আহমদ বিন হাম্বল, মুসনাদে ইবনে ওমর, হাদীস নং- ৬৬৪৬, ২/৫৮৭।

৩৯)হযরত সায়্যিদুনা ওয়াহাব বিন মুনাব্বাহ্  رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, “তাওরাতে লিপিবদ্ধ রয়েছে: “যখন তােমার রাগ আসবে, তখন আমাকে স্মরণ করাে, যখন আমার জালাল আসবে, তখন আমি তােমাকে স্মরণ রাখবাে এবং যখন তােমার উপর অত্যাচার করা হবে, তখন ধৈর্য ধারণ করাে, তােমাকে আমার সাহায্য করা, তােমার জন্য তােমার সাহায্যের চেয়ে উত্তম। নিজের হাতকে নাড়া দাও, তােমার জন্য রিযিকের দরজা খুলে যাবে"

তথ্যসূত্রঃফয়যুল কদীর, ৬০২২ নং হাদীসের পাদটিকা, ৪/৬২৯

দয়া ও কোমল হৃদয়ের ফযীলত
৪০)হযরত সায়্যিদুনা আনাস رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, নবী করীম, রউফুর রহীম ﷺ ইরশাদ করেন: “সেই সত্তার শপথ, যার কুদরতের হাতে আমার প্রাণ! আল্লাহ তায়ালা শুধুমাত্র দয়ালুকেই তাঁর দয়া দান করেন।” আমরা আরয করলাম: “ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ﷺ আমরা কি সবাই দয়ালু?” ইরশাদ করলেন: “সেই ব্যক্তি দয়ালু নয়, যে শুধুমাত্র নিজের এবং নিজের পরিবার-পরিজনদের উপর দয়া করে বরং দয়ালু সেই ব্যক্তি, যে সকল মুসলমানের উপর দয়া করে।”

তথ্যসূত্রঃআয যুহুদ লিহানাদ, বাবুর রাহমাতি, হাদীস নং-১৩২৫, ২/৬১৬

৪১)আমীরুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদুনা আবু বকর সিদ্দীক  رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, নবীয়ে করীম, রউফুর রহীম ﷺ ইরশাদ করেন: আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করছেন: “যদি তােমরা আমার দয়া পেতে চাও, তবে আমার সৃষ্টির প্রতি দয়া করাে।”

তথ্যসূত্রঃ আল কামিলু ফি দা ফায়ির রিজাল, নম্বর- ২৩/৫৯৩, খালিদ বিন ওমর, ৩/৪৫৭

৪২) হযরত সায়্যিদুনা উসামা বিন যায়েদ رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, প্রিয় আক্বা মক্কী মাদানী মুস্তফা ﷺ ইরশাদ করেন: “নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা দয়ালু বান্দাদের প্রতিই দয়া করে থাকেন।”

তথ্যসূত্রঃসহীহ বুখারী, কিতাবুজ জানায়িয, হাদীস নং- ১২৮৪, ১/৪৩৪

৪৩)হযরত সায়্যিদুনা জাবির رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, নবী করীম, রউফুর রহীম ﷺ ইরশাদ করেন: “যে মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি দয়া করেন না।”

তথ্যসূত্রঃসহীহ মুসলিম, কিতাবুল ফাযায়িল, হাদীস নং- ২৩১৯, ১২৬৮ পৃষ্ঠা।

৪৪) হযরত সায়্যিদুনা জরীর رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, হুযুর ﷺ ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি দয়া করে না, তাকেও দয়া করা হয় না এবং যে ব্যক্তি ক্ষমা করে না, তাকে ক্ষমা করা হয় না।”

তথ্যসূত্রঃআত তারগীব ওয়াত তারহীব, কিতাবুল কাযায়ি ওয়া গাইরুহু, হাদীস নং- ৩৪৪৮, ৩/১৫৪

৪৫) হযরত সায়্যিদুনা জরীর رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, নবী করীম, রউফুর রহীম ﷺ ইরশাদ করেন: “যে পৃথিবীবাসীকে দয়া করে না, আসমানের মালিক তাকে দয়া করেন না।”

তথ্যসূত্রঃআত তারগীব ওয়াত তারহীব, কিতাবুল কায়ি ওয়া গাইরুহু, হাদীস নং- ৩৪৫১, ৩/১৫৪

৪৬)হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ رضي الله عنه থেকে বর্নিত মদীনার তাজেদার,রাসূলদের সরদার,হুযুরে আনওয়ার ﷺ ইরশাদ করেন,"পৃথিবীবাসীদের প্রতি দয়া করো,আসমানের মালিক তোমার প্রতি দয়া করবেন"

তথ্যসূত্রঃমুসান্নিফ ইবনে আবী শায়বা, কিতাবুল আদব, হাদীস নং- ১০, ৬/৯৪

৪৭)হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে আমর  رضي الله عنه বর্ণনা করেন, আমি আল্লাহ তায়ালার প্রিয় হাবীব ﷺ - কে ইরশাদ করতে শুনেছি যে, “দয়া করাে, তােমার উপর দয়া করা হবে। ক্ষমা করাে, তােমাকে ক্ষমা করা হবে।”

তথ্যসূত্রঃশুয়াবুল ঈমান লিল বায়হাকী, বাবু ফি মুয়ালাজাতি কুল্ল যানবী বিহু গুবাতি, হাদীস নং-৭২৩৬, ৫/৪৪৯

৪৮) হযরত সায়্যিদুনা সাহাল বিন সাআদ رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, এক মহিলা প্রিয় নবী (ﷺ)এর দরবারে কোন চাহিদার কথা আরজ করার জন্য উপস্থিত হলেন, কিন্তু তার নবীয়ে করীম  এর নিকটে যাওয়ার কোন সুযােগ হলাে না। এ অবস্থা দেখে একজন সাহাবী নিজের স্থান ছেড়ে দিলেন এবং মহিলাটি সেখানেই বসে গেলেন। অতঃপর তার চাহিদা পূর্ণ হয়ে গেলাে। হুযুর ﷺ সেই সাহাবীকে জিজ্ঞাসা করলেন: “তুমি এরূপ করলে কেন?” তিনি আরয করলেন: “তার প্রতি আমার দয়া হয়েছিলাে।” এ কথা শুনে নবী করীম ﷺ ইরশাদ করলেন: “আল্লাহ তায়ালা তােমার প্রতি দয়া করুক।”

তথ্যসূত্রঃআল মু'জামুল কবীর, হাদীস নং- ৫৮৫৪, ৬/১৬১।

৪৯)হযরত সায়্যিদুনা কুররা رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি প্রিয় নবী (ﷺ) এর দরবারে আরয করলেন: “ইয়া রাসূলাল্লাহ্ (ﷺ)আমি যখন ছাগল জবাই করি, তখন তার প্রতি আমার দয়া হয়।” হুযুর ﷺ ইরশাদ করলেন: “তুমি যদি ছাগলের প্রতি দয়া করাে, আল্লাহ তায়ালা তােমার প্রতি দয়া করবেন।”

তথ্যসূত্রঃআল মুসনাদে লিইমাম আহমদ বিন হাম্বল, হাদীস নং- ১৫৫৯২, ৫/৩০৪

রাগ দমন করার ফযীলত
৫০)হযরত সায়্যিদুনা আনাস জুহানী رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, নবী করীম ﷺ ইরশাদ করেন: “যে প্রতিশােধ গ্রহণের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও নিজের রাগকে দমন করে নেয়, তবে আল্লাহ তায়ালা তাকে কিয়ামতের দিন সকল সৃষ্টির সম্মুখে আহ্বান করবেন এবং তাকে স্বাধীনতা দিবেন যে, হুরদের মধ্য থেকে যাকে খুশি নিয়ে নাও।”

তথ্যসূত্রঃসুনানে তিরমিযী, কিতাবু সিফতিল কিয়ামাতি, অধ্যায়- ৪৮, হাদীস  নং-২৫০১,৪/২২২।

৫১)হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর  رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, তাজেদারে মদীনা, হুযুর পুরনুর ﷺ ইরশাদ করেন: “মানুষের কোন চুমুক পান করা রাগের ঐ চুমুক থেকে উত্তম নয়, যা সে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পান করে।”

তথ্যসূত্রঃআল মুসনাদে লিইমাম আহমদ বিন হাম্বল, মুসনাদে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর, হাদীস নং- ৬১২২, ২/৪৮২

৫২)হযরত সায়্যিদুনা আনাস رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, নবীয়ে আকরাম ﷺ এমন কতগুলাে লােকের পাশ দিয়ে গমন করছিলেন যারা কুস্তি লড়ছিলাে। হুযুর ﷺ জিজ্ঞাসা করলেন: “এগুলাে কী হচ্ছে?” লােকেরা বললাে: “ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ﷺ অমুক খুবই শক্তিশালী। যেই তার সাথে লড়াই করে, সে তাকে পরাজিত করে দেয়।” তখন নবী করীম ﷺ ইরশাদ করলেন: “আমি কি তােমাদেরকে তার চেয়েও অধিক শক্তিশালী ব্যক্তি সম্পর্কে জানাবাে না? সেই ব্যক্তি, যার উপর কেউ অত্যাচার করলাে এবং সে রাগকে দমন করে নিলাে আর নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলাে, তবে এমন ব্যক্তি নিজের ও অপর ব্যক্তির শয়তানের বিরুদ্ধে বিজয়ী হয়ে যায়।”

তথ্যসূত্রঃমুসনাদিল বাযার, মুসনাদ আবী হামযা আনাস বিন মালিক, হাদীস নং-৭২৭২, ২/৩৪৫

৫৩)হযরত সায়্যিদুনা আনাস رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, প্রিয় আক্কা, মক্কী মাদানী মুস্তফা ﷺ ইরশাদ করেন: “তােমরা কি আবু দ্বামদ্বামের মত হতে পারনা?” সাহাবায়ে কিরামগণ رضي الله عنه আরজ করলেন: “আবু দ্বামদ্বাম কে?” হুযুর ﷺ ইরশাদ করলেন: “সে হলাে ঐ ব্যক্তি, যে ভাের হলে বলে:"হে আল্লাহ! আমি আমার জীবন ও সম্মান সমর্পন করলাম। অতএব সে গালি দানকারীকে গালি দিত না, অত্যাচারীর প্রতি অত্যাচার করতাে না এবং প্রহারকারীকে প্রহার করতাে না।”

তথ্যসূত্রঃজামেউল আহাদীসি লিস সুয়ুতী, হরফুল হামযা মাআল ইয়া, হাদীস নং- ৯৪৪৭, ৩/৪১০।

▶৫৪)হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস رضي الله عنه আয়াতে মােবারাকা  (পারা ৪, সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৩৪) কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং ক্রোধ-সংবরণকারীরা-এর তাফসীরে বলেন: “এটা দ্বারা উদ্দেশ্য হলাে, যখন কোন ব্যক্তি তােমাকে গালমন্দ করে এবং তুমি তার জবাব দেয়ার ক্ষমতা রাখ, কিন্তু তবুও নিজের রাগকে সংবরণ করে নিলাে এবং তাকে কোন উত্তর দেয় না।”

লােকদেরকে মার্জনা করার ফযীলত
৫৫)হযরত সায়্যিদুনা আনাস رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনুর ﷺ ইরশাদ করেন: কিয়ামতের দিন যখন লােকেরা হিসাব-নিকাশের জন্য দন্ডায়মান হবে, তখন একজন ঘােষনাকারী ঘােষনা করবেন, “যে ব্যক্তির প্রতিদান আল্লাহ তায়ালার দয়াময় দায়িত্বে রয়েছে তারা উঠুন এবং জান্নাতে প্রবেশ করুন।” অতঃপর দ্বিতীয়বার ঘােষনা করবেন, “যে ব্যক্তির প্রতিদান আল্লাহ তায়ালার দয়াময় দায়িত্বে রয়েছে, তারা দাঁড়িয়ে যান।” লােকেরা জিজ্ঞাসা করবে: “তারা কারা, যাদের প্রতিদান আল্লাহ তায়ালার দয়াময় দায়িত্বে রয়েছে?”ঘােষনাকারী বলবে: “ঐ লােক, যারা লােকদেরকে মার্জনা করে দিতাে।” অতএব অসংখ্য লােক দাঁড়িয়ে যাবে এবং হিসাব-নিকাশ ছাড়াই জান্নাতে প্রবেশ হয়ে যাবে।

তথ্যসূত্রঃআততারগীব ওয়াত তারহীব, কিতাবুল হুদুদ, হাদীস নং-১৭, ৩/২১১

৫৬) হযরত সায়্যিদুনা ওকবা বিন আমের رضي الله عنه বলেন, আমি নবীয়ে করীম, রউফুর রহীম ﷺ এর সাথে মিলিত হলে তিনি আমার হাত ধরে ইরশাদ করলেন: “হে ওকবা! আমি কি তােমাকে দুনিয়া ও আখিরাতবাসীদের সচ্চরিত্রবান সম্পর্কে বলবাে না?” আমি আরয করলাম: “অবশ্যই ইরশাদ করুন।” হুযুর ﷺ ইরশাদ করলেন: “যে তােমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে, তুমি তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখাে, যে তােমাকে বঞ্চিত করবে, তুমি তাকে দান করাে, যে তােমার প্রতি অত্যাচার করবে, তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও।”

তথ্যসূত্রঃআল মুজামুল কবীর, হাদীস নং- ৭৩৯, ১৭/২৬৯

৫৭)হযরত সায়্যিদুনা ওবাই বিন কাব رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, হুযুরে আকরাম ইরশাদ করেন: “যার এটা পছন্দ যে, তার জন্য (জান্নাতে) প্রাসাদ তৈরি করা হােক এবং তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হােক, তবে তার উচিৎ,যে তার উপর অত্যাচার করবে তাকে ক্ষমা করে দেয়া, যে তাকে বঞ্চিত করে তাকে দান করা এবং যে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা।”

তথ্যসূত্রঃআল মুস্তাদরিক, কিতাবুত তাফসীর, হাদীস নং- ৩২১৫, ৩/১২

৫৮) হযরত সায়্যিদুনা আবু আব্দুল্লাহ জাদলী   رضي الله عنه বলেন: আমি উম্মুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দীকা رضي الله عنه এর নিকট হুযুর নবীয়ে করীম, রউফুর রহীম ﷺ এর উত্তম চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, তখন তিনি বললেন: “হুযুর ﷺ কোন মন্দ কথা বলতেন না, কোন মন্দ কাজ করতেন না, বাজারে হৈ-হুল্লোড় করতেন না আর মন্দের উত্তরও মন্দভাবে দিতেন না বরং প্রিয় নবী (ﷺ) ছিলেন ক্ষমাশীল ও মার্জনাকারী।

তথ্যসূত্রঃসুনানে তিরমিযী, কিতাবুল বিররে ওয়াস সিলাহ, হাদীস নং- ২০২৩, ৩/৪০৯


৫৯)উম্মুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দীকা رضي الله عنه ; বলেন: নবীয়ে আকরাম, নূরে মুজাসসাম ﷺ জিহাদ ব্যতীত কখনাে কাউকে নিজের হাতে প্রহার করেননি এবং কখনাে ব্যক্তিগত আক্রোশের প্রতিশােধ নেননি। তবে হ্যাঁ, যখন কোন ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার হারাম ঘােষিত কোন বিষয়ে লিপ্ত হতাে, তখন হুযুর পুরনূর ﷺ আল্লাহ তায়ালার জন্য তার প্রতিশােধ নিতেন। হুযুর ﷺ এর নিকট যা কিছুই চাওয়া হয়েছে কখনাে তা নিষেধ করেননি তবে গুনাহের প্রতি ধাবিত হওয়া বিষয়াবলী ছাড়া, কেননা নবী করীম রউফুর রহীম ﷺ সেসব ব্যাপারে লােকজন থেকে দূরে থাকতেন। যখনই তাঁকে দুটি কাজের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, তখন হুযুর ﷺ সহজ কাজটিই বেছে নিতেন।”

তথ্যসূত্রঃআল মুসনাদে লিইমাম আহমদ বিন হাম্বল, মুসনাদে আয়েশা, হাদীস নং- ২৫০৩৯, ৯/৪৫১

৬০)হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)ইরশাদ করেন: “যে লজ্জিত ব্যক্তির ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দিবে, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।”

তথ্যসূত্রঃমুসনাদে বাযার, মুসনাদে আবী হুরায়রা, হাদীস নং- ৮৯৬৭, ২/৪৭৭

৬১) উম্মুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদাতুনা আয়েশা সিদ্দীকা رضي الله عنه ; থেকে বর্ণিত, হুযুর নবীয়ে মুকাররাম, নূরে মুজাস্সাম ﷺ ইরশাদ করেন: “ভদ্র ব্যক্তিদের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দাও, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে শরয়ী শাস্তির যােগ্য হয়ে যায়।”

তথ্যসূত্রঃআল মুসনাদে লিইমাম আহমদ বিন হাম্বল, মুসনাদে আয়েশা, হাদীস নং- ২৫৫৩০, ৯/৫৪৪

▶৬২) হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর رضي الله عنه  বলেন: “শিষ্টচার সম্পন্নদের শাস্তি দিও না, যদি সে সৎ হয়ে থাকে।

তথ্যসূত্রঃফয়যুল কদীর, হরফুত তা', ৩২৩৩ নং হাদীসের পাদটিকা, ৩/২৯৯

৬৩) হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরায়রা رضي الله عنه থেকে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম, শাহে বনী আদম, হুযুর ﷺ ইরশাদ করেন: “সদকা করাতে কখনাে সম্পদ কমে যায় না। যে ব্যক্তি ক্ষমা করে দেয়, আল্লাহ তায়ালা তার সম্মান বাড়িয়ে দেন আর যে আল্লাহ তায়ালার জন্য বিনয়ভাব পােষণ করে, আল্লাহ তায়ালা তাকে উন্নতি দান করেন।”

তথ্যসূত্রঃসহীহ মুসলিম, কিতাবুল বিররে ওয়াস সিলাহ, হাদীস নং- ২৫৮৮, ১৩৯৭ পৃষ্ঠা।

৬৪)হযরত সায়্যিদুনা মারওয়ান বিন জিনাহ্  رضي الله عنه বলেন: “দুনিয়া এই বিষয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত যে, অসদাচরণকারীকে কোন ব্যক্তি ক্ষমা করে দিবে।”

তথ্যসূত্রঃতারিখে মদীনা দামেসক লিইবনে আসাকির,নম্বর ২১৫৭,রবিই বিন ইয়াহইয়া,১৮/৮৪

৬৫)হযরত সায়্যিদুনা মাইসারা বিন হালবিস رضي الله عنه বলেন: “সুসংবাদ সেই ব্যক্তির জন্য, যে ব্যক্তি ঐ স্থানে হক আদায় করে, যেই স্থানে মানুষ হক আদায় করতে জানে না। অতএব, আল্লাহ তায়ালা তাকে আপন সন্তুষ্টির পরিচয় দান করে দেন, তা এমন এক সময় যা অজ্ঞাত থাকা ব্যক্তিরাই পরিত্রাণ পেতে পারে। তাদের অন্তর অন্ধকারের প্রদীপ। আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেন আর তাদেরকে সকল অপরিস্কার অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গা থেকে মুক্তি দান করেন।

মুসলমানদের কল্যাণ কামনা করার ফযীলত
৬৬) হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর থেকে বর্ণিত, নবীয়ে রহমত, শফীয়ে উম্মত, হুযুর ﷺ ইরশাদ করেন: “ধর্ম হচ্ছে কল্যাণ কামনা করা।” সাহবায়ে কিরামগণ আরয করলেন:ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ﷺ কার? ইরশাদ করেন,আল্লাহ্ তা'আলার,তাঁর কিতাবের,তাঁর রাসূলের,মুসলমানদের ইমামের এবং সাধারণ মুমিনের।

তথ্যসূত্রঃসহিহ মুসলিম,কিতাবুল ঈমান,বাবু বয়ানুদ দ্বীনিন নসিহাতি,হাদিস নং-৫৫,৪৭পৃষ্ঠা
Top