এক হাদীসে বর্ণিত আছে,
-“যে ব্যক্তি বুধবার কিংবা শনিবার নিজ শরীরে শিঙ্গা প্রয়ােগ করে দুষিত রক্ত অপসারণ করবে, তার শরীরে কুষ্ট রােগ (সাদা রােগ) হবে। আর সে তখন নিজেকেই দোষারােপ করবে। হয় একজন বিজ্ঞব্যক্তি, যার নাম মুহাম্মদ ইবনে জাফর নিশাপুরী তার শিঙ্গা প্রয়ােগের প্রয়ােজন হয়েছিল। সেদিন ছিল বুধবার। তিনি মনে করেছিলেন যেহেতু উল্লেখিত হাদিসটি সহিহ পর্যায়ের নয়’ সেহেতু শিঙ্গা প্রয়ােগে কোন দোষ নেই। ২ ওই দিন তিনি স্বীয় দূষিত রক্ত অপসারণের কাজ সম্পন্ন করলেন কিন্তু এর সাথে সাথে কুষ্ট রােগ তার শরীরে ছড়িয়ে পড়ল যখন রাতে ঘুমালেন তখন স্বপ্নযােগে হুযুর করীম ﷺ দীদার লাভ করলেন। আর তিনি তাঁর নিকট রােগের ব্যাপারে আর করলেন, তখন হুযুর ﷺ ইরশাদ করলেন, অর্থাৎ সাবধান! আমার হাদিসকে হালকা (তুচ্ছ) মনে করবে না। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ ﷺ , আমি তওবা করে নিচ্ছি এরপর জেগে ওঠে দেখেন তিনি সুস্থ হয়ে গেছেন। ইমাম ইবনে আসাকির ) বর্ণনা করেন,ইমাম ইবনে আসাকির رضي الله عنه হাফিস রাযী আলী ইবনে মিহরান ইবনে হারুন থেকে স্বীয় ‘তারিখে দামেস্ক' এ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি হযরত আবু মুঈন হুসাইন ইবনে হাসান তাবরীকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন- আমি একবার শনিবার শিঙ্গা লাগাতে মনস্থ করেছি। সুতরাং আমি আমার ক্রীতদাসকে হাজ্জাম (ক্ষৌরকার) কে শিঙ্গা লাগানাের জন্য ডাকতে নির্দেশ দিলাম। ক্রীতদাস তাকে ডাকতে চলে যাবার এবং বুধবার আমার মনে পড়ল নবী করীম ﷺ ওই হাদিস যাতে শনিবার শিঙ্গা লাগালে শ্বেত রােগ হবে বলে বর্ণিত হয়েছে। তারপর কিছু চিন্তা ভাবনা করে বললাম, এ হাদীসের সনদে মধ্যে তাে কিছু দুর্বলতা আছে। শেষ পর্যন্ত আমি শিঙ্গা প্রয়ােগ করলাম। ফলে আমার শ্বেত রােগ হয়ে গেল। অতঃপর স্বপ্নযােগে নবী করীম ﷺ এর সাথে স্বপ্নে সাক্ষাত হল। তখন আমি স্বীয় অবস্থা সম্পর্কে হুযুর ﷺ এর মহান দরবারে ফরিয়াদ করলাম। ইরশাদ করেন,সাবধান! আমার হাদিসকে তুচ্ছ জ্ঞান করবে না অতঃপর আমি আল্লাহর ওয়াস্তে মানত করলাম, আল্লাহ পাক যদি আমার শ্বেত রােগ থেকে মুক্তি দেন, তবে আমি আর কখনাে নবী করিম ﷺ এর হাদিসকে তুচ্ছ জ্ঞান করব না, ওই হাদিস সনদ অনুযায়ী সহিহ (বিশুদ্ধ) হােক কিংবা দ্বঈফ (দুর্বল) হােক। সুতরাং আল্লাহ পাক আমার শ্বেত রােগ থেকে মুক্তি দান করলেন। | এভাবে আল্লামা শিহাবুউদ্দীন খিফাযি হানাফী رضي الله عنه এর রচিত “নাসিমুর . রিয়াদ্ব শরহে শিফা” গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে,নখ কাটা বা ঘেঁড়ে ফেলা সুন্নাত। তবে বুধবার এটা সম্পর্কে নিষেধ বলে বর্ণিত আছে এবং এটাও যে, এতে শ্বেত রােগ হয়। জনৈক আলিম সম্পর্কে কথিত আছে যে, তিনি বুধবার নখ কেটেছেন। উপস্থিত লােকেরা তাকে (হাদীসের ভিত্তিতে নিষেধ হওয়ার কারণে) নিষেধ করলেন। উত্তরে তিনি বললেন, হাদিসটি সহিহ নয়। তখনই তার শ্বেত রােগ ছড়িয়ে পড়ল।একদা তিনি হুযুর ﷺ কে স্বপ্নে দেখছে এবং তার নিকট স্বীয় রােগ সম্পর্কে আবেদন করলেন। হুযুর করীম ﷺ তাকে উত্তরে ইরশাদ করলেন, তুমি কি শােননি যে সেটা নিষিদ্ধ ? আরয করলেন, হাদিস সহিহ হিসেবে আমার কাছে পৌছেনি তখন ইরশাদ হল, তােমার জন্য তাে এতটাই যথেষ্ট ছিল যে, হাদিসটি আমারই নামে উদ্ভূত হয়ে তােমার কানে পৌঁছেছে। এটা ইরশাদ করার পর হুযুর ﷺ স্বীয় পবিত্র হাত তার শরীরে বুলিয়ে দিলেন। তৎক্ষণাৎ তিনি সুস্থ হয়ে গেলেন এবং হাদিস শরীফ শুনে আর বিরােধ পােষণ করবেন না মনে তাওবা করে নিলেন।”
উলামায়ে কেরামের বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং আওলিয়ায়ে কেরামের কাশফ দ্বারা ঘঈফ বা দুর্বল হাদিস ও মজবুত হাদিস হিসেবে পরিগণিত হয়। হযরত শায়খ মুহিউদ্দিন ইবনে আরাবী رضي الله عنه একটি হাদিস শুনে ছিলেন যে, যে ব্যক্তি ৭০০০০ বার কালেমা তায়্যেবাহ পড়বে, তার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। একদা একজন কাশফের অধিকারী যুবক বললেন, আমার মৃত মাকে স্বপ্নে জাহান্নামে দেখতেছি। তা শুনে হযরত শায়খ মুহিউদ্দীন ইবনে আরাবী رضي الله عنه ইতিপূর্বে যে সত্তর হাজার বার কালেমায়ে তাইয়্যেবাহ পড়ে ছিলেন সেগুলাে সাওয়াব মনে মনে ঐ যুবকের মায়ের জন্য বখশিশ করে দেওয়া মাত্রই যুবক হেঁসে দিলেন এবং বললেন, এখন আমার মাকে জান্নাতে স্বপ্নে দেখছি। শায়খ মুহিউদ্দীন رضي الله عنه বলেন, আমি এ হাদিসখানার বিশুদ্ধতা উক্ত যুবক (ওলীর) কাশফের দ্বারা জানতে পারলাম।
উক্ত ঘটনাটি মাজমাউল বিহারে আল্লামা তাহের হানাফী رضي الله عنه বর্ণনা করেছে এবং দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা কাসেম নানুতবী তাহজিরুন্নাস” গ্রন্থে ঘটনাটি হযরত জুনায়েদ বাগদাদী رضي الله عنه 'র সূত্রে বর্ণনা করেছেন। (জা'আল হক, বাংলা,৩/১০ পৃ.মুহাম্মাদী কুতুবখানা) ইমাম তিরমিযী رضي الله عنه অনেক হাদীসে বলেছেন,
-“এই হাদিসটি হাসান, সহিহ গরীবও বটে। (সুনানে তিরমিযী, ১/১২৮পৃ. হাদিস :৭২, ও ১২৬২, হাদিস : ১৯০ এবং ১৫৫৪, হাদিস : ৪২৮) ইমাম তিরমিযী বক্তব্যের মর্ম হলাে, এই হাদিসখানা কয়েক রকম সনদের দ্বারা বর্ণিত। এক সনদে দ্বারা হাসান আবার এক সনদ দ্বারা সহিহ আবার এক সনদ দ্বারা গরীব বা দুর্বল। তাই শুধু গরীব দুর্বল নিয়ে বসে থাকা যাবে না। দ্বঈফ সনদের হাদিসের অবহেলাকারীদের শাস্তির ব্যাপারে আ'লা হযরত (রহ.) এর খলিফা আল্লামা জুফারুদ্দিন বিহারি رضي الله عنه রচিত "সহিহুল বিহারী" প্রথম খন্ড বিষদ আকাদে দেখতে পারেন