দুর্বল হাদিস একাধিক সূত্রে বর্ণিত হলে হাসান-এ পৌছে যায় ইলমে হাদিসের এ নীতিমালাটি এখানে এ জন্য উল্লেখ করলাম বর্তমান আহলে হাদিসগন দ্বঈফ সনদের হাদিস একাধিক সনদে বর্ণিত হলেও সেটি নাকি দ্বঈফই থাকবে। কিন্তু নিজেদের স্বার্থে আবার পুরাে উল্টো। নিজেদের স্ব পক্ষে কোন অত্যন্ত দুর্বল হাদিস থাকলেও তাকে 'হাসান' বলতে একটু দ্বিধাবােধ করেন না। এ উসূলে। হাদিসের এ নীতিমালাটি বিভিন্ন হাদিস সম্পর্কে আলােকপাতকালে অনেক প্রয়ােজন। পড়বে তাই বারবার যাতে উল্লেখ করতে না হয় সেজন্য এখানে তা উল্লেখ করলাম। এ প্রসঙ্গে আমি কিছু মুহাদ্দিস ও ফকিহগনের মতামত নিম্নে উল্লেখ করলাম
দলীল নং-১
আল্লামা মােল্লা আলী কারী  বলেন,“দ্বঈফ হাদিসও একাধিক সনদে বর্ণিত হলে “হাসান হাদিস এর পর্যায়ে পৌঁছে যায়।”
দলীল নং-২ আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী رضي الله عنه অন্য স্থানে বলেন,
-“একাধিক সনদে যদিও দ্বঈফ হাদিস বর্ণিত হয় তবে বর্ণিত ঐ হাদিস “হাসান বলে গণ্য হবে বা উপনীত হবে।”
দলীল নং- ৩ আল্লামা কামালুদ্দীন ইবনে হুমাম رضي الله عنه বলেন,
-“হাদীসের সমস্ত রাবী দুর্বল প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন তরিকায় বর্ণিত হওয়ার কারণে তা হাসানে' পরিণত হয়ে যায়।"
দলীল নং- ৪ আল্লামা কামালুদ্দীন ইবনে হুমাম رضي الله عنه বলেন,
-“যখন হাসান হাদিস অনেক সনদ দ্বারা বর্ণিত হয়, তখন তা সহিহ পর্যন্ত উন্নীত করা জায়েজ আছে, এবং দুর্বল সনদের হাদিস এই পদ্ধতিতে (একাধিক তরিকায় বর্ণনায়) দলীল হওয়ার যােগ্যতা অর্জন করে। যখন বিভিন্ন সনদে হাদিস বর্ণিত হয়, তা দৃঢ় দলীল হওয়ার ও আদেশ প্রয়ােগের যােগ্যতা রাখে।'
দলীল নং-৫ আল্লামা ইমাম শা'রানী رضي الله عنه বলেন,নি:সন্দেহে জমহুর মুহাদ্দিসীনগণ দুর্বল হাদিসকে অধিক সনদে বর্ণিত হওয়ায় কারণে দলীল হওয়ার যােগ্যতা রূপে মেনে নিয়েছেন এবং সেটিকে কোন সময় সহিত আবার কোন সময় হাসান'র সহিত মিলিয়েছেন। এই প্রকারের দুর্বল হাদিস  ইমাম বায়হাকীর ‘সুনানে কোবরা’ মধ্যে অধিক পাওয়া যায়, যাকে ইমাম মুজতাহিদীন এবং আসহাবে আইয়াম্মা দলীল হিসেবে গ্রহণের জন্য ইচ্ছাপােষন করেন।
দলীল নং- ৬ আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতি رضي الله عنه বলেন,
-“মাতরুক ও মুনকার হাদিস বিভিন্ন তরিকায় বর্ণিত হওয়ার কারণে দ্বঈফ হাদীসের মর্যাদায় উপনীত হয়। আবার কখনাে হাদীসে “হাসানের মর্যাদায় উপনীত হয়ে থাকে।”
দলীল নং- ৭ আল্লামা জাফর আহমদ উসমানী বলেন,
-“দ্বঈফ হাদিস একাধিক তরিকায় বর্ণিত হওয়ার কারণে, যদিও তা এক সনদে বর্ণিত ছিল, তা সমষ্টিগত ভাবে হাসানের দরজায় উন্নীত হয় এবং এটি দলীল হিসেবে প্রয়ােগ করা যায়।
দলীল নং-৮ আল্লামা আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী رضي الله عنه বলেন,
-“আর দ্বঈফ হাদিস যদি বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হয় এবং তার দুর্বলতা দূরীভূত হয়, তাহলে তাকে “হাসান লিগাইরিহি” নামে নামকরণ করা হয়।”
আর দ্বঈফ হাদিস যদি বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হয়, গ্রহণীয় হওয়ার প্রমাণ দ্বারা শক্তিশালী হয়, তবে তা ‘হাসান লিগাইরিহী’ হয়ে যাবে।”
দলীল নং- ১০ আল্লামা শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী رضي الله عنه  বলেন :
 -“আর দ্বঈফ হাদিস যদি বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হওয়ার দরুন “হাসান লিগাইরিহী” হওয়ার মর্যাদায় উপনীত হয়, তা দলীল হওয়া সম্পর্কে আলিমগণ একমত হয়েছেন।"
দলীল নং- ১১ আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী رضي الله عنه  বলেন :
-“যখন দ্বঈফ হাদিস অন্য কোন সনদ বা বর্ণনা দ্বারা শক্তিশালী হয় অর্থাৎ দুর্বলতা দূর হয়ে যায়, তখন তা হাসান লিগাইরিহী রূপে গৃহিত হবে। ”
দলীল নং- ১২
দুররুল মুখতার গ্রন্থের প্রথম খন্ড  শীর্ষক অধ্যায়ে ওযুর বিভিন্ন অংশের দু'আ প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে,
-“এ হাদিসটি ইমাম ইবনে হিব্বানর প্রমুখের কয়েকটি সনদ দ্বারা মার সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। "
উক্ত রেওয়ায়েতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে আবেদীন শামী  رضي الله عنه বলেন :
-“কতেক সনদ কতেক সনদকে শক্তি জোগায়। তাই এ হাদিস হাসান” পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।”



Top